রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:০৪

পানির নিচে রাজধানীর অনেক এলাকা

অনলাইন ডেস্ক
পানির নিচে রাজধানীর অনেক এলাকা

সড়কে পানি, অলিগলিতে পানি, দোকানে পানি, গ্যারেজে পানি, ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। চারদিকে ড্রেনেজের পয়োবর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধময় পানি। এর মধ্যে দিয়েই চলাফেরা করছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বৃষ্টি থামার প্রায় দশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা এখনও কাটেনি রাজধানীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর পিলখানা, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়াসহ মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় ও অলিগলিতে পানি জমে আছে।

এছাড়াও দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুর সংলগ্ন টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কুতুবখালী, কাজলা, শনির আখড়া, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা (ডিএনডি এলাকা) রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরও কয়েক এলাকার সড়কে ও অলিগলিতে জলজট হয়ে আছে। এতে মানুষের যেমন ভোগান্তি হচ্ছে তেমনি বিঘ্নিত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে পানিবন্দি যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ফিরোজ আলম আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন জলাবদ্ধতা থাকে। ড্রেনের অলিগলির ময়লা পানি বাসায় ঢুকে গেছে। এই দুর্ভোগ বৃষ্টি হলেই পোহাতে হয়। পাশের এলাকার অবস্থা আরও খারাপ। কুতুবখালীর দিকে তো যাওয়াই যায় না। হাঁটু সমান পানি ওখানে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের।

বৃষ্টি হলেই ডিএনডি এলাকায় দুর্ভোগ বাড়ে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সেখানকার বাসিন্দারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই এদিকে হাঁটু পানি হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা আসলে বাস্তবায়ন হয় না। যার কারণে আমাদের বছরের পর বছর এই জলাবদ্ধতার কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি যায় না। ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। তাছাড়া খালগুলোর ওপর নির্মাণ করা ব্রিজগুলো নিচু ও সরু হওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু কেন যে এর কোনও সমাধান সিটি করপোরেশন খুঁজে বের করতে পারছে না তা জানা নেই।

দক্ষিণ সিটির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন স্লুইসগেট অংশে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক বলে জানায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাছাড়া, এই মুহূর্তে ওই ওয়ার্ডের কোথাও জলাবদ্ধতাজনিত সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন তারা। এই ওয়ার্ডসহ আরও প্রায় ৫০টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কোনও সমস্যা নেই বলেও জানায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে ডিএনডি এলাকা নিচু হওয়ায় সেখানে এখনও পানি জমে আছে।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু নিচুতে অবস্থিত। যার কারণে এখানে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বৃষ্টি থামার পর থেকেই জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করছে। রাতে যদি আবার বৃষ্টি হয় তাহলে ঘুরেফিরে আবারও পানি জমে যাবে। ডিএনডির এসব ওয়ার্ড দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর রাস্তা, ড্রেনেজ, সড়কবাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এখন শুধু জলাবদ্ধতার সমস্যাটা দূর করতে পারলেই এলাকার মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃষ্টি থামার পর থেকে পানি সরানোর কাজ চলছে, এখনও কাজ চলমান আছে। এখানকার পানি নিষ্কাশনের যে খাল তা ময়লা-আবর্জনাতে ভরপুর। মানুষকে যত বলি খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না কিন্তু মানুষ শুনে না। এখন খাল দিয়ে পানি যাচ্ছে না। যতদিন না মানুষ সচেতন হবে, খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করবে ততদিন এই সমস্যা দূর হবে না। কারণ বৃষ্টির পানি যেখান দিয়ে যায় সেটাই যদি ময়লার কারণে বন্ধ থাকে তাহলে তো পানি যাওয়ার পথ থাকে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করছি কিন্তু মানুষেরও একটু সচেতন হতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, রাস্তা থেকে পানি সরাতে সকাল থেকেই কাজ চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পাঁচ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়াও সংস্থাটির ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম। প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে ১০ জন কর্মী রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

অতিবৃষ্টির কারণে সড়ক থেকে পানি সরাতে কিছু সময় লাগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের জন্য কল্যাণপুরে পাঁচটি পাম্প সকাল থেকে একযোগে চালু রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখনও যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে কুইক রেসপন্স টিম পাঠিয়ে সেসব অঞ্চলের ড্রেন পরিষ্কার করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। কোথাও কোনও পানি জমে থাকলে ঢাকা উত্তর সিটির হটলাইন ১৬১০৬ নম্বরে ফোন করে জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চলমান আছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রকৌশলী বিভাগের ১০০টি টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। আশা করছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি যে এলাকাগুলোতে জলজট সৃষ্টি হয়েছে তাও নিরসন হয়ে যাবে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কমলাপুর টিটি পাড়া পাম্প স্টেশনে ৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি বড় পাম্প এবং ৫ কিউসেক (১ কিউসেক=২৮.৩২ লিটার/সেকেন্ড) ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি ছোট পাম্প সচল রয়েছে। ধোলাইখাল পাম্প স্টেশনে ৭ দশমিক ৫ কিউসেক (১ কিউসেক= ১ হাজার লিটার/সেকেন্ড) ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি পাম্প সচল রয়েছে। অর্থাৎ, বড় ৪টি ও ছোট ৩টি পাম্প মিলিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ২৫ হাজার ৪২৫ লিটার পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এছাড়া, হাতিরঝিল স্লুইস গেট চালু রয়েছে। যদিও এটি রাজউক নিয়ন্ত্রণাধীন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়