প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ২২:২৫
চাঁদপুরে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট চালু হওয়ার পরও অবস্থা অপরিবর্তিত
চাঁদপুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং চিকিৎসা সবই বলতে গেলে সদর উপজেলাতেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব অবস্থা এমনটাই। অন্য সাত উপজেলার পারফরমেন্স খুবই হতাশার। শুধু হতাশার বললে হবে না, খুবই লজ্জার। একমাসে সদর উপজেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা যদি হয় ২৬৪৭, আর পাশাপাশি সে মাসেই অন্য উপজেলায় এর সংখ্যা যদি হয় মাত্র ৫, তাহলে এর তুলনা বা পার্সেন্টেজ কোন্ ভগ্নাংশে বের করতে হবে তা ঠিক করতে বিশ^খ্যাত গণিত শাস্ত্রবিদও হয়ত গলদঘর্ম হয়ে যাবেন। এক মাসে দুই অংকের সংখ্যাও যায় নি ওই উপজেলাটি। একমাসে চাঁদপুর জেলার আট উপজেলার নমুনা সংগ্রহের চিত্রই বলে দিচ্ছে সদর ব্যতীত অন্য সাত উপজেলায় সরকারি চিকিৎসকগণ কতটা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। এমনকি রেপিড এন্টিজেন টেস্ট (২০ মিনিটে রিপোর্ট) চালু হওয়ার পরও অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয় নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক তথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাগণ (ইউএইচএন্ডএফপিও) এ ক্ষেত্রে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন তা সহজেই বোধগম্য। অথচ উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত সকল দায়িত্ব ইউএইচএফপিওর উপর। উপজেলাগুলোতে করোনার নমুনা সংগ্রহও হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই লজ্জা এবং হতাশাজনক পারফরম্যান্সের দায়ভার কি কোনোভাবেই ইউএইচএফপিওগণ এড়াতে পারেন?
|আরো খবর
গত বছরের মার্চ থেকে চাঁদপুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়। তখন এই নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হতো। সে বছরের ২৭ আগস্ট চাঁদপুরে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ আরটি পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে চাঁদপুরেই করোনার টেস্ট তথা কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ শুরু হয়। এর ফলে দিনের রিপোর্ট দিনেই পাওয়া যাচ্ছে। এখনো এটি অব্যাহত আছে। চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড় ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপুর অসামান্য অবদানে চাঁদপুরে করোনাকালে বহুল প্রত্যাশিত এমন একটি প্রাপ্তি অর্জন হলেও করোনা শনাক্তকরণে যেমন সাফল্য দেখানোর প্রত্যাশা ছিল বাস্তবে তা দেখা যায় নি। সদর ব্যতীত অন্য সাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণের নিষ্ক্রিয়তা বা অনাগ্রহের কারণেই এমনটা দেখা যাচ্ছে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের ৯ জুলাই পর্যন্ত এই ১৬ মাসে চাঁদপুর জেলায় সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা হবে প্রায় ৩৪ হাজার। এর মধ্যে সদর উপজেলারই ২৯ হাজার। বাকি ৫ হাজার অন্য সাত উপজেলার মিলে। গত জুন মাসে চাঁদপুর জেলার সংগৃহীত নমুনার উপজেলা ভিত্তিক সংখ্যা দেখলে হতাশার চিত্র আরো ফুটে উঠে। জুন মাসে নমুনা সংগ্রহের উপজেলা ভিত্তিক সংখ্যা হচ্ছে: চাঁদপুর সদর ২৬৪৭, হাইমচর ৪৩, মতলব উত্তর ৩৩, মতলব দক্ষিণ ১০৪, ফরিদগঞ্জ ৯৯, হাজীগঞ্জ ৭০, কচুয়া ৫ ও শাহরাস্তি ২০৬। জুন মাসজুড়ে আট উপজেলায় সংগৃহীত নমুনা হচ্ছে মোট ৩২০৭টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬৪৭, বাদবাকি সাত উপজেলা মিলে মাত্র ৫৬০টি। এটা কি কোনো পার্সেন্টেজের পর্যায়ে পড়ে?
রেপিড এন্টিজেন টেস্ট চালু হওয়ার পরও অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয় নি। অথচ সরকার এই পদ্ধতিতে করোনার টেস্ট চালু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও যেনো করোনার টেস্ট করা হয়, যাতে অধিকাংশ মানুষ টেস্টের আওতায় চলে আসে। এ ক্ষেত্রেও উপজেলাগুলোতে তেমন কোনো সাফল্য নেই।
১ জুলাই থেকে রেপিড এন্টিজেন পদ্ধতিতে টেস্ট চালু হয়। ২০ মিনিটে রিপোর্ট পাওয়া যায় এই পদ্ধতির টেস্টে। ১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত এ নয়দিনে চাঁদপুর জেলার আট উপজেলায় এই পদ্ধতিতে নমুনা টেস্ট হয় ১৫১৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১২২টি, আর অন্য সাত উপজেলা মিলে ৩৯৩টি। উপজেলা ভিত্তিক এই সংখ্যা হচ্ছে : চাঁদপুর সদর ১১২১, হাইমচর ২৬, মতলব উত্তর ৪৮, মতলব দক্ষিণ ৭৫, ফরিদগঞ্জ ৫৬, হাজীগঞ্জ ৪২, কচুয়া ৩৮ ও শাহরাস্তি ১০৮। এই চিত্রও হতাশার।
সদর ব্যতীত অন্য সাত উপজেলার পারফরমেন্স এতোটা হতাশা কেনো জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, উপজেলাগুলোতে একদিন পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আবার লোকজনও আসতে চায় না। ডাক্তারদেরও কিছুটা শিথিলতা আছে। সব মিলিয়ে উপজেলাগুলোর চিত্র বলা যায় হতাশারই। তবে তিনি বলেন, উপজেলার অনেকেই চাঁদপুর সদর হাসপাতালে এসে নমুনা দিয়ে যান। তাই নমুনা দেয়া থেকে তেমন কেউ বাদ যায় না।
সিভিল সার্জনের এই বক্তব্যের বাস্তবতা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো, উপজেলাগুলোতে যে একদিন পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেটা সপ্তাহের কোন্ দিন কোন্ দিন হয় এ তথ্য গ্রামের মানুষেরা জানে না। যে কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যে মানুষটি একবার উপজেলা সদরে আসেন নমুনা দিতে, তিনি তখন নমুনা না দিতে পেরে ফিরে গেলে দ্বিতীয়বার আর আসেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে কোন্ দিন কোন্ দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয় তা প্রচার না করার কারণে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অসহযোগিতার কারণেই মূলত উপজেলাগুলোতে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ খুবই কম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিতে না পেরেই মানুষ সদর হাসপাতালে চলে আসেন।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা, তাঁর নির্দেশনা এবং কঠোর তদারকিতে যেনো এই করোনাকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোও জেলা সদর হাসপাতালের মতো সরব এবং সক্রিয় থাকে।