প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০৬
স্বামীর আশ্রয়ে থাকার দাবি নিয়ে ঘুরছে শিক্ষিকা রেহানা ইয়াসমিন
শিক্ষক স্বামীর আশ্রয়ে থাকার দাবি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে স্বেচ্ছায় অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা রেহানা ইয়াসমিন (৪২)। প্রায় ২০ বছরের সংসার জীবনে হঠাৎ করে ২০১৯ সালে রেহানার সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার অভিযোগ করেও পাওয়া যায়নি কোনো সমাধান।
|আরো খবর
অভিযোগের আলোকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে, হামানকদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষিকা (স্বেচ্ছায় অবসরপ্রাপ্ত) রেহানা ইয়াসমিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন ১৮ অক্টোবর ২০০২ সালে একই ইউনিয়নের পাইকাস্তা গ্রামের মরহুম হাবিবুল্লাহ প্রধানিয়ার ছেলে, ২৩নং পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামের (৫৩) সাথে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের সংসার জীবন ১৬/১৭ বছর পর্যন্ত সুন্দরভাবে চললেও হঠাৎ ২০১৯ সালে দেখা দেয় অশান্তি। তাদের সংসার জীবনে এক ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে মো: মাহি হাসান (১৭) মেয়ে মেহেরুন মাহিনী (১২)।
রেহানার সাথে সরাসরি কথা হলে এবং অভিযোগের আলোকে তিনি বলেন, তার স্বামী শহিদুল ইসলাম ১৯ সালের পর থেকে কখনও বাসায় আসতেন, কখনো আসতেন না। পরে কিছুদিন পর থেকে তার স্বামী সকলের খোঁজ-খবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়। দুই সন্তান নিয়ে শুরু হয় রেহানার মানবেতর জীবনযাপন এবং তার আচার-আচরণে বিভিন্ন রকম দোষ ত্রুটি দেখতে পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন বলে রেহানাকে জানিয়ে দেন এবং শহিদুল ইসলামকে তালাকনামা পাঠানোর জন্য বিভিন্নভাবে রেহানাকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু রেহানা কোনরকম তালাকনামা না পাঠালে শহিদুল ইসলাম নিজেই কোর্টের মাধ্যমে রেহানাকে তালাকনামা পাঠিয়েছে বলে প্রচার করতে থাকে। যদিও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
নিরুপায় রেহানা কোনরকম উপায়ান্তর না পেয়ে স্বামীর আশ্রয়স্থলে থাকার আকুতি জানিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে আশিকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে বারবার শহিদুল ইসলামকে নোটিশ দিলেও কোনো রকম সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ১৭ মে ২০২১ তারিখে আবারও আশিকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে এবং শহিদুল ইসলাম নোটিশ পেয়ে ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেন তিনি রেহানাকে নিয়ে সংসার করবেন না। পরে রেহানা মানসিক ও আর্থিকভাবে নির্যাতন সইতে না পেরে এবং স্বামী তাকে তালাক দিবে এই ভয়ে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শহিদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পরে আবার ও স্বামী-সন্তান নিয়ে স্বামীর আশ্রয়ে থাকতে ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করেন। কিন্তু সে আবেদনেও রেহানা আক্তার কোনরকম উপকার পায়নি। রেহানা আরো বলেন, আমি স্বেচ্ছায় অবসর প্রাপ্ত একজন স্কুল শিক্ষিকা। স্কুলে কি কি নিয়ম মোতাবেক চলতে হবে সেটা আমার জানা আছে। কিন্তু শহিদুল ইসলাম তার কর্মস্থল পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অসংখ্যবার নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রেহানা ইয়াসমিনের অভিযোগগুলোর সত্যতা জানতে তার স্বামী শহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে রেহানা ইয়াসমিনের স্বামী শহিদুল ইসলামের কর্মস্থল পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উল্লেখিত দুইজনের বিষয়ে আমরা অবগত। বিষয়টি সমাধান করার জন্য আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক তদানীন্তন আছে।
অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাব উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন রেহানা ইয়াসমিন যে অভিযোগ করেছে তার কিছু কিছু অংশ আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না, অন্য যে বিষয়গুলো আমাদের এখতিয়ারে আছে, তা নিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেষ খবর পর্যন্ত জানা যায় মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রথম স্ত্রীর সাথে কোন রকম সমস্যা সমাধান না করেই দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘটকের মাধ্যমে মেয়ে দেখতেছেন।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে রেহানার আকুতি, যে কোন শর্তে হলেও সে তার একমাত্র ছেলে মাহি হাসান ও মেহেরুন মাহিনীকে নিয়ে স্বামীর আশ্রয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে চায়।