প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৮
চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সাক্ষাৎকার-৩
জীবনের প্রাপ্তি বা পরিবর্তন পুরোটাই এসেছে রোটার্যাক্ট করার কারণেই
------শাহেদুল হক মোর্শেদ

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সহযোগী সংগঠন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার হিসেবে চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন ক্লাবটির সাবেক সভাপতি (বর্তমানে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট কমিটির চেয়ারম্যান) এবং চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহেদুল হক মোর্শেদ। তাঁর কাছে ক্লাবের ইতিহাস, সাফল্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং মানবিক কাজ সম্পর্কে প্রশ্নমালা আকারে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বেশ সাবলীলভাবে প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের আইপিপি এবং চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব রো. কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আপনাকে স্বাগত জানাই। কেমন লাগছে এই বিশেষ মুহূর্তে?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : বাংলাদেশের ২য় সনদপ্রাপ্ত ক্লাব হিসেবে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব ৫০ বছর পার করছে। আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ৫০ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনে প্রাক্তন রোটার্যাক্টরদের পুনর্মিলনী আয়োজন আমাকে আপ্লুত করছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাক্তন রোটার্যাক্টরগণের সম্মিলন ঘটবে, দেখা হবে সকলের সাথে, সে অপেক্ষায় শিহরিত।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কীভাবে এ ক্লাবের সাথে যুক্ত হলেন ?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : ১৯৯৬ সালের প্রথমদিকে আমার এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া। ১৯৯২ সালে চাঁদপুর সেন্ট্রাল ইন্টার্যাক্ট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে পদচারণা শুরু হলেও তৎকালীন সময়ে রোটার্যাক্টর আমিন আহমেদ ভাইয়ের আমন্ত্রণে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবে আমার অভিষেক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এই ক্লাব আপনার জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে? আপনি কি উপকৃত হয়েছেন?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : জীবনের প্রাপ্তি বা পরিবর্তন যদি বলতে হয়, তবে তার পুরোটাই এসেছে রোটার্যাক্ট করার কারণেই। প্রথমেই নিজেকে মানবিক একজন মানুষ হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। সামাজিকতার পাশাপাশি নিজেকে সংগঠক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা ছিলো। যা আমার কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ছিলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব নিয়ে কোন্ বিষয়টি গর্বের মনে হয় আপনার কাছে?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : দীর্ঘদিন রোটার্যাক্ট সংগঠন করেছে এমন সকলেই তাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত। রোটার্যাক্টের মূলমন্ত্রই হচ্ছে নিজেকে তৈরি করা। এই মূলমন্ত্র ধারণ করতে পারাই চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের জন্যে গর্বের বলে আমি মনে করি, যা অনেক রোটার্যাক্ট ক্লাবের মধ্যে বিদ্যমান নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জানা মতে, গত ৫০ বছরে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সবচে' উল্লেখযোগ্য মানবিক প্রকল্পগুলো কী কী? কোন্ প্রকল্পটি সমাজে সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : সামাজিক কাজ যদি বলতে হয়, তবে কোভিড-১৯ দিয়েই শুরু করতে হয়। চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের এই মানবিক কাজের পুরোপুরি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলো চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব। কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সেবা, হাসপাতালে নিয়ে আসা, ভর্তি করানো, অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করে বাসা থেকে রোগীদের স্থানান্তর করা--জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজগুলো করেছে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের নিবেদিতপ্রাণ সদস্যরা। সে সময় কোভিড রোগীদের জন্যে ঢাকা থেকে প্রতি রাতে বিভিন্ন সংগঠন থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ট্রাক বোঝাই করে রিফিল করে আনা হতো। যে কাজটি চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর পৌরসভার বদান্যতায় সম্ভব হয়েছে।চাঁদপুরবাসীর সেবায় নীরবে কাজ করেছে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্যগণ। শিক্ষা কার্যক্রম, অসংখ্য মেডিকেল ক্যাম্প, চক্ষু শিবির, বিভিন্ন সময়ের বন্যায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, ৪৫ বছর যাবৎ চলমান রোটারী দাতব্য চিকিৎসালয়ে প্রতি শুক্রবারে স্বেচ্ছাশ্রম, বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম, জেলা প্রশাসন ও চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের প্রতিটি সামাজিক ও মানবিক কাজে ভলান্টিয়ার হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণ--এই ক্লাবের উল্লেখযোগ্য কাজ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : স্থানীয় যুবকদের সমাজসেবায় যুক্ত করতে ক্লাবটি কীভাবে ভূমিকা রাখছে?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : প্রতিটি সামাজিক কাজ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভায় নিয়মিতভাবেই তরুণদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে এ সংগঠন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ৫ বা ১০ বছরে ক্লাবকে কোথায় দেখতে চান?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : চাঁদপুরকে রোটারীর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব স্থায়ীভাবে অন্ততপক্ষে ১টি প্রকল্প গ্রহণ করে সমাজ উন্নয়নে নিজেদের তুলে ধরবে বলে বিশ্বাস করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে কী ধরনের পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে মনে করেন?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে, আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে বর্তমান প্রজন্মকে নেতৃত্বদানে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সমাজের কিশোর-তরুণদের জন্যে আপনার বার্তা কী হবে?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : নিজেকে একজন পরোপকারী ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করা। আর প্রতিনিয়ত স্রষ্টাকে স্মরণ করা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকের তরুণ প্রজন্মকে রোটার্যাক্টে যুক্ত হতে আপনি কীভাবে উৎসাহ দেবেন?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : একজন মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্যে তরুণদের জন্যে রোটার্যাক্ট হতে পারে অন্যতম প্রদর্শক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে অনেক প্রশ্ন করলাম। এ প্রশ্নমালার বাইরে আপনার আর কিছু বলার আছে কি?
শাহেদুল হক মোর্শেদ : ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ৩৩ বছর আমি রোটারী আন্দোলনের সাথে জড়িত। চাঁদপুরে আধুনিক সংগঠনের জনক চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠিতা ডা. নূরুর রহমান হতে অদ্যাবধি অসংখ্য সু-সংগঠকের সংস্পর্শে থাকতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। রোটারী পরিবারের সাথে দীর্ঘ পথচলার কারণেই হয়তো আরো বহু সংগঠনের সাথে যুক্ত বা নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বর্তমানে রোটারীর প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরের সকল আয়োজনে যুক্ত রয়েছি। বিত্ত থাকলেই হবে না, চিত্তও থাকতে হবে। চিত্ত ও বিত্তের সমন্বয় যতোদিন রয়েছে, রোটারী পরিবারের সাথে ততোদিন থাকবো ইনশাআল্লাহ।








