প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫, ২১:০১
ইফার মসজিদভিত্তিক প্রকল্পের অনুমোদন ও শিক্ষকদের ঈদের পূর্বেই বকেয়াসহ বেতন দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) কর্তৃক পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৭ম পর্যায়ে সমাপ্ত, প্রকল্পের জনবলকে রাজস্বকরণ ও আউটসোর্সিং-এর আওতাধীন না করে প্রস্তাবিত ৮ম পর্যায় প্রকল্প অনুমোদন এবং শিক্ষকদের ঈদের পূর্বেই বকেয়াসহ বেতন-ভাতা দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। রোববার (২৩ মার্চ ২০২৫) সকাল ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন চাঁদপুর জেলার ১ হাজার ২শ' ৩৬জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কেয়ারটেকারগণ। পরে তাঁরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৩২ বছর যাবৎ চলমান মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৭ম পর্যায়) শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের জনবলকে রাজস্বকরণ ও আউটসোর্সিংয়ের আওতাধীন না করে প্রস্তাবিত ৮ম পর্যায় প্রকল্প অনুমোদন ও ঈদের পূর্বেই বকেয়াসহ বেতন-ভাতা দেয়ার দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন। প্রকল্পটি ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ৭ম পর্যায় ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতা ও সুনামের সাথে দেশব্যাপী প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষা কেন্দ্র ও ২,০৫০টি রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েও বর্তমানে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশে জনতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বৈষম্যের শিকার হওয়া চাকরিজীবী ও আমজনতার ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা বৈষম্যের অবসান হতে শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সারা দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে দারিদ্র্য, সুবিধা বঞ্চিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে বিনামূল্যে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ, কিশোর কিশোরী ও বয়স্কদের পবিত্র কুরআন শিক্ষা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দান করে আসছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম ওলামা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার নারী ও পুরুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, মানবিক ও নৈতিকতার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করা, সরকারের উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে জনগণকে ধারণা প্রদান ও উন্নয়নকর্মসূচীতে সম্পৃক্তকরণে এ প্রকল্পটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষার একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পে নিয়োজিত জনবল অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার, মাদক ও চোরাচালান রোধসহ জনসাধারণের ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে ইমামদের মাধ্যমে মসজিদে জুমার খুৎবায় আলোচনা, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আলেম-ওলামার অংশগ্রহণ, কোভিড-১৯ নামে কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের জানাজা, কাফন-দাফন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে আসছে।
প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৩/০৬/২০১৮ খ্রি. তারিখে জারিকৃত পত্রের মাধ্যমে ভুতাপেক্ষভাবে ০১/০৭/২০০০খ্রি. থেকে রাজস্বখাতের আওতাভুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ের জনবল দীর্ঘদিন কাজ করার পরও তাদেরকে রাজস্বখাতের আওতাভুক্ত করা হয়নি। যেহেতু প্রকল্পটি সম্পূর্ণ রাজস্ব বাজেটের আওতায় পরিচালিত হয়, সেহেতু জনবলকে রাজস্বকরণ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না।
জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত চলমান থাকলেও প্রকল্পে কর্মরত জনবলের মূল বেতন বছর বছর কখনো বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকারের প্রতিটি দপ্তরের কর্মচারীদের মতো সমহারে কাজ করেও কেবলমাত্র প্রকল্পে কর্মরত থাকার কারণে বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল অন্যত্র চাকুরির বয়স হারিয়ে প্রকল্প শেষে চাকুরি হারানোর ভয়ে চরম হতাশায় জীবন যাপন করছে। এছাড়া প্রকল্পে কর্মরত জনবলের স্বাভাবিকভাবে ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল, পদোন্নতি না থাকায় সামাজিক মর্যাদাহানিসহ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অর্থ কষ্টে রয়েছে। প্রকল্পের বঞ্চিত ও হতাশাগ্রস্ত অবশিষ্ট জনবলকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত করা হলে তারা মাঠ পর্যায়ে সরকারের সকল পলিসি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম) পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন হলেও দীর্ঘ ৩২ বছরের এই শিক্ষামূলক প্রকল্পটিকে আউটসোসিং করার চিন্তা ভাবনা চলছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ৯% হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি আউটসোর্সিং করা হয়নি। অথচ ৯০% মুসলমানের দেশে কুরআন শিক্ষা প্রকল্পকে আউটসোর্সিং করার হীন চক্রান্ত করা হচ্ছে। যদি কুরআন শিক্ষার এই প্রকল্পটি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়, তাহলে আলেম ওলামার মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইফার
ফিল্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ হাছান, মো. মজিবুর রহমান, মো. জাহিদুল হক, মো. সালাউদ্দিন, মুহা. জুলফিকার হাসান মুরাদ, মো. আশিকুর রহমান ও কম্পিউটার অপারেটর মোঃ মাহাবুব আলম, মো. আক্তার হোসেন (কর্মী), জাতীয় ইমাম সমিতি চাঁদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মাও. মো. আব্দুস সালাম, হাফেজ সানাউল্লাহ প্রমুখ।