প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০৫
হাজীগঞ্জে অভাব নেই!

১০/১২ কিংবা ১৫ রমজানের পরেই হাজীগঞ্জ বাজার জমে উঠেছে। বাহারি সব হোটেলে বাহারি সব ইফতারির অভাব নেই, বাহারি সব মার্কেটের বাহারি পসরার অভাব নেই, বাহারি সব ক্রেতার বাহারি মার্কেটিংয়ের অভাব নেই, বাহারি মসজিদের বাহারি মুসল্লির অভাব নেই, ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের অভাব নেই, সড়কে যানজটের অভাব নেই, ফুটপাত দখলদারির অভাব নেই, দলীয় কোন্দলের অভাব নেই।--কী নেই হাজীগঞ্জে? এক কথায় সাদা চোখে হাজীগঞ্জে কিছুর অভাব নেই। এমনটাই ভাবছেন আর বলছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরজমিনে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ ২০২৫) হাজীগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যাংকের শাখাগুলো কিংবা মার্কেটগুলো লোকে লোকারণ্য। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান সড়কসহ মার্কেটগুলোতে প্রচুর ক্রেতার সমাগম। অনেকটাই তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একই পরিস্থিতি ঠিক ইফতারির পর থেকে রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত চলছে। মার্কেটে বা ব্যাংকে আগতদের ৯০ ভাগ নারী।
প্রধান সড়কের দুপাশে স্থায়ী দোকানের সামনে ফুটপাতগুলো দু স্তর হকারের দখলে থাকে। ফুটপাত আর সড়কের কাঁধ মিলিয়ে দু স্তর হকার বসার কারণে মূল সড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই আছে।
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড়ো মসজিদে রমজান আসলে মুসল্লির সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সকল ওয়াক্তে প্রচুর মুসল্লি জমায়েত হয়। গত জুমাসহ আগের জুমার নামাজে মুসল্লিদেরকে মসজিদ উপচিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বাজারস্থ বিভিন্ন মার্কেটের গলিতে ছাদে নামাজ আদায় করতে হয়।
হাজীগঞ্জ বাজারের হোটেলের মান ও খাবারের সুনাম জেলার গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে জেলার বাইরে বিস্তৃত। এসব হোটেলে দুপুর থেকেই বাহারি সব ইফতারি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। বড়ো বড়ো প্রধান হোটেল ছাড়া ছোট হোটেলগুলো কোনো অংশ পিছিয়ে নেই, এমনকি শুধু বিরিয়ানি বিক্রির দোকানই রয়েছে ৮-১০টি, যারা সারাদিন বিরিয়ানি আর তেহারি বিক্রি করে। হাতে গোণা কয়েকটি হোটেলে বিক্রি করা মালাইকারী নামক মিষ্টির পরিচিতি সর্বত্র।
হাজীগঞ্জে যানজটের কোনো অভাব নেই। গত কয়েক মাসের যানজটে নাকাল হাজীগঞ্জবাসী। ঈদের ভিড়ে আরো নাকাল হয়েছে যানজটে। ঈদকে সামনে রেখে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বাজার ব্যবসায়ী, পৌরসভা ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভলান্টিয়ার দেবার পরে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনো অংশে কম নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে দুই অংশের রেষারেষিতে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে মঞ্চ ভাংচুর, আগুন দেয়া, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ আওয়ামীলীগ দুভাগে বিভক্ত ছিলো। তবে তা অনেকটাই নেতা-কর্মীদের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির রেষারেষিতে হাজীগঞ্জ বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা মারামারিসহ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত শনিবার উপজেলা ও পৌর বিএনপির ইফতার মাহফিলে এখানকার বিএনপির কাণ্ডারী লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক নেতা-কর্মীদেরকে স্পষ্ট বলেছেন, আমরা কারো চাঁদাবাজির দায় নেবো না, আমরা চাঁদাবাজির তকমা নেবো না, আর আমার দলের কেউ এমন অপকর্মে জড়িত হলে ছাড় দেয়া হবে না।
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির অর্থ সম্পাদক হাসান মাহমুদ জানান, বাজারের যানজট নিরসনে সমিতির পক্ষ থেকে ১০ রমজান হতে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ছিনতাই আর পকেটমার বন্ধের বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনসহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের ফোর্স রোটেশন অনুযায়ী কাজ করছে।