মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪০

আদালত কর্তৃক ফরিদগঞ্জ থানার ওসিকে রিসিভার নিয়োগ

গুপ্টিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ

গুপ্টিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ
ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি

ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি এলাকায় আদালতের আদেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করেছে প্রতিপক্ষ। নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তি হলেও দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করেছেন প্রতিপক্ষ ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে খোকন। নির্মাণ কাজে বাধা দেয়ার পরও পেশীশক্তি প্রদর্শন করে তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীনদের দাপট দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয় খোকন গং। উপায় না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন শিক্ষক নাছির উদ্দিন। কিন্তু আদালতের আদেশকে পর্যন্ত খোকন উপেক্ষা করেছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গুপ্টি গ্রামের মোহাম্মদ মুছলিম মিয়ার ছেলে নাছির উদ্দিন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক (ননক্যাডার)। তাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি পুরানো হলেও সম্পত্তি ছিলো অন্য একজনের। শিক্ষক মানুষ, অন্য রাস্তা ব্যবহারে দ্বিধা ছিলো। তাইতো বাড়ি যাওয়ার রাস্তার জন্যে ২০১৯ সালে আবদুর রব গংয়ের কাছ থেকে ৬৫নং খতিয়ানের ৮৫১ দাগে ৩০ শতক ও ৮৫৫ দাগে ২ শতক জমি ক্রয় করেন। যার চৌহদ্দি দেয়া আছে। দলিল নং ১১১৩। ক্রয়ের পর নাছির উদ্দিন উক্ত ভূমি নিজ নামে খারিজও করে নেন। পাশাপাশি ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বি.এস. রেকর্ডিয় মালিক নাছিমা বেগম গং থেকে ১৮১নং খতিয়ান থেকে ১০০৫ দাগে আরো ৭.৬৮ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার মধ্যে চলাচলের রাস্তার জন্যে চৌহুদ্দিকৃত ২ শতক জমিও আছে। যার দলিল নং ৫৩২।

খোকন ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবদুর রব গং-এর ওয়ারিশ ও আবদুল মালেক শেখের কাছ থেকে ৬৫ ও ১৮১নং খতিয়ানের ১০০৫ দাগে সাড়ে ৩২ শতক ভূমি ক্রয় করে। কিন্তু খোকন অনৈতিকভাবে নাছির উদ্দিনের চৌহুদ্দিসহ ক্রয়কৃত ভূমি তার দলিলে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। যা স্পষ্ট প্রতারণা। অথচ ঐ দাগে মোট ১.৯২ শতক ভূমি রয়েছে। খোকন অশান্তি করার লক্ষ্যে জেনেশুনে ইচ্ছেকৃতভাবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে এই ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। খোকন জমি ক্রয় করে নাছির উদ্দিনের খরিদকৃত জমি এবং পুরোনো রাস্তাসহ বাউন্ডারি করার পরিকল্পনা নিলে ২০২৩ সালের ৪ জুলাই নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলায় বিবাদী করা হয় খোকনকে। নাছির উদ্দিন অসহায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদগঞ্জকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্ত করে বিজ্ঞ আদালতে বিগত ২৪/৭/২০২৩ ও ২৫/১০/২০২৩ তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিজ্ঞ আদালত প্রতিপক্ষগণের বিরুদ্ধে প্রসেডিং ড্রয়ের আদেশ দেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষগণ বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত, চাঁদপুর-এ ফৌ.রি. ৩৯৯/২০২৩ নং মোকদ্দমা দায়ের করলে বিগত ৫/৫/২০২৪ তারিখে উক্ত রিভিশন মোকদ্দমা না মঞ্জুরক্রমে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বহাল ও বলবৎ রাখেন।

মামলা করার পর বিবাদী জোর করে বাদীর ক্রয়কৃত ভূমি ও চলাচলকৃত রাস্তাতে বাউন্ডারি দেয়াল করে নেয়। তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার বিজ্ঞ আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেন তার অংশ বিশেষ হলো, 'ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুবিদপুর কর্তৃক ২৩/৭/২৩ তারিখে সম্পাদিত প্রাথমিক তদন্তের সময় উক্ত নতুন বাউন্ডারী দেয়াল ছিলো না। কিন্তু নিম্ন স্বাক্ষরকারী কর্তৃক ১৪/৯/২০২৩ তারিখে সরজমিন তদন্তের সময় নতুন বাউন্ডারী দেয়াল দৃশ্যমান দেখা যায় অর্থাৎ বাদী পক্ষ অত্র মামলা দায়েরের পর রাতারাতি বিবাদীপক্ষ বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ করে দীর্ঘদিনের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পূর্বে নালিশী ভূমিতে প্রায় ৭ ফুট মাটির রাস্তা ছিল এবং তা বাদীসহ নালিশী ভূমির পিছনে বসবাসরত অন্যান্য অধিবাসীগণের পূর্ব হতেই চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিবাদীপক্ষ ৬/৭/২০২৩ হতে রাস্তা বন্ধের কাজ শুরু করতে থাকে।'

আদালতের আদেশ অমান্য করে খোকন নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করেন। এমনকি স্থায়ীভাবে ইমারত নির্মাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তারা ভেক্যু দিয়ে মাটি কেটে ভূমির আকার আকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে। এমতাবস্থায় নাছির উদ্দিন ১৩/১১/২০২৪ তারিখে নালিশী তফসিল ভূমিতে স্থিতাবস্থার আদেশের প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত চলাচলের পথ উন্মুক্ত থাকবে বলে আদেশ প্রদান করেন। নালিশী ভূমিতে চলাচলের পথে যাতে কেউ কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে নির্দেশ প্রদান করলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জের প্রতিনিধি ১৪/১১/২০২৪ তারিখে সরজমিনে গিয়ে প্রতিপক্ষগণকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ সম্পর্কে অবগত করিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।

৩ দিন কাজ বন্ধ রেখে ১৮/১১/২০২৪ তারিখে পুনরায় কাজ শুরু করে। এতে শান্তি ভঙ্গ এবং খুন খারাবিসহ অস্থিতিশীল অবস্থার আশংকা প্রকাশ করে বাদী বিজ্ঞ আদালতের কাছে ২০/১১/২০২৪ তারিখে রিসিভার নিয়োগের প্রার্থনা করেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে ২০/১১/২০২৪ তারিখে ২০০ নম্বার স্মারকে নালিশী ভূমিতে অফিসার ইনচার্জ, ফরিদগঞ্জ থানাকে রিসিভার নিয়োগ করেন। সে আলোকে গত ২২/১১/২০২৪ তারিখ শুক্রবার থানার অফিসার ইনচার্জের পক্ষে এসআই নাসির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নালিশী ভূমির রিসিভার গ্রহণ করেন। ২য় পক্ষ নালিশী ভূমি রিসিভারের অনুকূলে বুঝিয়ে দেয় এবং এসআই নাসির নালিশী ভূমিতে লাল কাপড় ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন।

বাদী নাছির উদ্দিন বলেন, আমি একজন শিক্ষক মানুষ। আমার প্রতিপক্ষরা পেশী শক্তি এবং টাকার প্রভাব খাটিয়ে অন্যায়ভাবে আমার পথের জায়গাসহ বাউন্ডারি দেয়াল করে। কোনো সভ্য মানুষ এমন করতে পারে না। আমার পেশী শক্তিও নেই, টাকার জোরও নেই। তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তারা আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। বিবাদী আমাকে এবং আমার সাক্ষীদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।

বিবাদী খোকন বলেন, উনি (নাছির উদ্দিন) যে দুই শতক জায়গা কিনেছেন তা রাস্তা কভার করে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যা বলি তা শতভাগ সঠিক না। আমি বসে সামাধান করতে রাজি।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য শহীদুল্লাহ গাজী বলেন, এদের এই জায়গা নিয়ে অনেক আগে থেকে ঝামেলা। এ বিষয়ে ২০২৩ সালে একটি মামলাও হয়। মামলার পরে খোকন জায়গা কিনে।

এসআই নাসির বলেন, মামলার বিবাদী দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বাউন্ডারি করে দেয়। আদালতের আদেশ পেয়ে আমরা সেখানেই যাই এবং রিসিভার গ্রহণ করি। সেই সাথে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়