প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৬
খোয়া বিছানো রাস্তায় শহরবাসীর দুর্ভোগ
সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদার লাপাত্তা : উপর্যুপরি পৌরসভার তহবিল সংকট
১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত একশ' আঠাশ বছরের পুরানো
চাঁদপুর পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গা রাস্তা আর ধুলোবালিতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন উন্নয়ন কাজের খোয়া বিছানো রাস্তায়
যানবাহন চলাচলের কারণে অতিরিক্ত ধুলাবালি উড়ছে। এতে রাস্তায় চলাচলরত শিক্ষার্থী, যাত্রী ও পথচারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। মুখে মাস্ক, রুমাল ব্যবহার করেও স্বস্তি পাচ্ছে না চাঁদপুর শহরের সাধারণ মানুষ।
গেল বর্ষা মওসুম থেকে শুরু হয় শহরবাসীর রাস্তার দুর্ভোগ। বর্তমান শুস্ক মওসুমে খোয়া বিছানো রাস্তায়
গত কয়েক মাস ধরে এসব সড়কের দুরবস্থা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে পৌরবাসীকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ১নং ওয়ার্ডের পুরাণবাজার খাল রাস্তা, রমনীমোহন রোড, নিতাইগঞ্জ রোড, ৫নং খেয়াঘাট, পলাশের মোড় হতে লোহারপুল, মৈশালবাড়ি হতে মক্কা মিল ইউসুফ কোম্পানির মোড়, চালতা গাছতলা, জাফরাবাদ মোড় হতে দোকানঘর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা।
অপরদিকে নতুনবাজার এলাকার নিউ ট্রাক রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঘোষপাড়া সংলগ্ন
হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখ হতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ পর্যন্ত ও বিপণীবাগ হতে তালতলা পর্যন্ত আব্দুল করিম পাটোয়ারী রোডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লার অনেক রাস্তাই ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
এ সমস্ত সড়কে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনে মালামাল নিয়ে দুর্ভোগের মাঝেই চলাচল করতে হয়। এতে করে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে।
পুরাণবাজারস্থ পল্লী চিকিৎসক সুব্রত ঠাকুর, বাজারের ব্যবসায়ী জগবন্ধুর প্রবীর সাহাসহ স্থানীয় অনেকেই জানান, পৌর এলাকার সড়কগুলো দীর্ঘদিন থেকে কোনো সংস্কার না করার ফলে বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। ভাঙ্গা রাস্তায় দুর্ভোগের সাথে এখন নতুন করে যোগ হয়েছে উড়ন্ত ধুলোবালি। প্রচুর পরিমাণ ধুলোবালি উড়ছে। রাস্তার আশ- পাশের দোকান ও মার্কেটের লোকজন ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে অনেকে নিজ উদ্যোগে পাইপযোগে পানি ছিটাতে দেখা যায়। ঢাকার মতো চাঁদপুর শহরেও বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন।
এসব রাস্তার উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হচ্ছে না। এতে পৌবাসীকে অনেক কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকের যাত্রীরা জরাজীর্ণ রাস্তার ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কিছু রাস্তার ফুটপাতসহ ড্রেন নির্মাণ কাজ ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সময়কালে শুরু করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর লাপাত্তা হয়ে যায় কাজের ঠিকাদার।সেই থেকে থমকে রয়েছে রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন কাজ। এখন গাড়ির চাকায় পিষ্ট রাস্তায় বিছানো বালু, ইট, সুরকিতে প্রচুর ধুলোবালি রাস্তায় চলাচলরত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবার নাকে-মুখে- চোখে গিয়ে পড়ছে।
সড়কগুলো সংস্কারের বিষয়টি চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভাতেও আলোচনায় উঠেছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পুরাণবাজার- লোহারপুল থেকে দোকানঘর রাস্তার।
পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও অর্থের অভাবে সংস্কার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে নিউ ট্রাক রোড, বঙ্গবন্ধু সড়কের একাংশের খুবই নাজুক অবস্থা।
চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এইচ এম শামসুদ্দোহা জানান, যেসব রাস্তার টেন্ডারের কাজ শুরু করা হয়েছে, সেগুলোর কাজ শেষ করার জন্যে ঠিকাদারদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারা সাদা পাথর এনেছিল, আমরা বলেছি কালো পাথর এনে রাস্তার পিচঢালাই কাজ করতে। শহরের অন্যান্য রাস্তার উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভার প্রয়োজনীয় তহবিল নেই। এই কারণে আমরা ওই রাস্তাগুলোর টেন্ডার করাতে পারছি না।
এসব সড়ক ছাড়াও পুরো শহরের অধিকাংশ সড়কের অবস্থা ভালো নয়। তাই জেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করেছেন শহরবাসী।