মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
  •   নির্মাণের এক বছর না যেতেই ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের বেহাল দশা
  •   শেষ হলো পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা
  •   ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  •   মোবাইল ব্যবহারে নিষেধ করায় শিশু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৯

আবারো প্রতারণা করলেন সেই প্রধান শিক্ষক

শয্যাশায়ী গুরুতর অসুস্থতার নামে মিথ্যা নাটক সাজালেও আবেদন নাকচ করে দেয় মাউশি

শামীম হাসান ॥
আবারো প্রতারণা করলেন সেই প্রধান শিক্ষক
সোমবার উপজেলা চত্বরে হামলার শিকারের পর স্ত্রী আলেয়া বেগমের সাথে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন।

ফরিদগঞ্জ আবিদুর রেজা পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন (কাজল) পেশায় একজন প্রধান শিক্ষক হলেও প্রতারণা যেন তার রক্তে মেশা। বিগত দিনে সনদপত্র নিয়ে প্রতারণা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়ার প্রতারণা, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার প্রতারণা করলেও এবার প্রতারণা করলেন অসুস্থতার নামে দীর্ঘসময় ধরে ছুটি কাটানোর নামে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর শয্যাশায়ী গুরুতর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ৩ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনের ছুটির আবেদন করেন তিনি। আবেদনে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিবরণ অনুযায়ী ৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বেড রেস্টে থাকার কথা। অথচ তার পরদিন ৪ নভেম্বর তাকে ফরিদগঞ্জের একাধিক স্থানে হাসিখুশিভাবে ঘুরতে দেখা যায়।

বিষয়টি জানাজানি হলে দুপুর ১টার দিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে তার ওপর হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। তাকে মারধরের সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে ‘ভুয়া হেড মাস্টার’, ‘টাউট হেড মাস্টার’ বলে চিৎকার করতে শোনা গেছে।

প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিনকে মারধরের কথা জানতে পেরে তার স্ত্রী ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া বেগম কান্নাকাটি করে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করেন এবং দ্রুত একটি গাড়িতে করে তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যান। জানা যায়, এর আগেও তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর ১১ দিনের ছুটির জন্যে আবেদন করেছিলেন। যদিও তার ছুটি মঞ্জুর হয়নি মর্মে জানিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। ৩ নভেম্বর থেকে যিনি গুরুতর অসুস্থ থাকলে কী করে ৪ নভেম্বর পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে দিব্বি ঘুরে বেড়ান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনগণ। প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন হামলার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি চিকিৎসাকালীন ছুটিতে বেড রেস্টে আছি। এডিসি স্যারের ডাকে ইউএনও অফিসে অপেক্ষা করছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু বখাটে আমাকে হামলা করে। যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক তার অফিসে আসার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ এরশাদ উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে ইউএনও অফিসে আসতে বলার তথ্যটি সঠিক নয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা চত্বরের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আগে জানতাম শিক্ষকতা মহান পেশা। কাজল মাস্টারের প্রতারণার কথা শুনতে শুনতে এই পেশাটিই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। যিনি উপজেলা চত্বরে আসতে পারেন, তিনি স্কুলে যেতে পারবেন না কেন? তাহলে কি তিনি বাসায় বসে বসে সরকারি বেতন খাওয়ার ধান্দা করছেন? প্রশাসন আদৌ কি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন? না-কি এবারও কাজল মাস্টার সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলবেন তা সময়ই বলে দিবে।

আবুল বাশার নামের একজন জানান, যিনি সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে পার পেয়ে গেছেন, তার কাছে অসুস্থতার নাটক সাজানোতো কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। তার কিছুই হবে না। প্রশাসনকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা কাজল মাস্টার জানেন।

হামলাকারীদের মধ্যে একজনের সাথে আলাপ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমরা যখন স্কুলে ছিলাম তখন তিনি আমাদের হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাইয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কোটায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পুরো স্কুলকে অঘোষিত আওয়ামী লীগের আখড়া বানিয়ে রেখেছিলেন। আমাদের সাধারণ ছাত্রদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যোগ দিতে বাধ্য করতেন। তিনি কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না দিয়ে গত তিন মাস ধরে স্কুল নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। আজকের এই হামলা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ছুটি মঞ্জুর করা তো দূরের কথা, প্রধান শিক্ষকের সাথে গত ২০ দিনেও আমার সাথে কোনো কথা হয়নি। তাই ৩ নভেম্বর থেকে তিনি ছুটিতে থাকার বিষয়ে আমি বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কুমিল্লা অঞ্চল অফিস কিছু জানে না। উপ-পরিচালক আরও বলেন, এর আগে তিনি ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডাঃ আমিনুল ইসলাম সুমনের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বেড রেস্টে থাকার মত অসুস্থতার কথা বলে ১১ দিনের ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন, তার অফিস কপি রিসিভ করা হয়। কিন্তু তার আবেদনের যৌক্তিকতা খুঁজে না পাওয়ায় সেই ছুটিও মঞ্জুর হয়নি। মোট কথা গত তিন মাসে তিনি কখনোই চিকিৎসাকালীন ছুটিতে ছিলেন না।

প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিনকে বেড রেস্টে পাঠানো চিকিৎসক, চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডাঃ আমিনুল ইসলাম সুমন জানান, রফিকুল আমিন সাহেব আমার চেম্বারে এসেছিলেন। আমি তার বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ সপ্তাহ তাকে রেস্টে থাকতে বলেছিলাম, বেড রেস্টের কথা বলিনি। আমি আবারো বলছি, অাই এডভাইসড হিম ফর টেক রেস্ট, নট বেড রেস্ট। দুটি দুই জিনিস। রেস্টে যে কেউই থাকতে পারেন। কেন হেড টিচার স্কুলে যাচ্ছেন না এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। স্কুলে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে আমার প্রেসক্রিপশনে কিছু উল্লেখ নেই। রফিকুল আমিনের সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ডাঃ আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, ৩ নভেম্বর থেকে তিনি কেন আবার ২ সপ্তাহের ছুটি চাইলেন বা কোন্ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কী চিকিৎসা নিচ্ছেন তা আমার জানা নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়