মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৫২

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের

ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৭ অক্টোবর, ২০২৪-এ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাংলাদেশের সংস্কারের জন্যে আরও চারটি কমিশন গঠন করেছে। এগুলো হলো স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম উন্নয়ন কমিশন, শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশন এবং মহিলা বিষয়ক কমিশন। এজন্যে বিশিষ্ট নাগরিকদেরও কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছে। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে এবং তাদের প্রধান হিসেবে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই কমিশনগুলো হলো : নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বলেছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলো করে নিবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারই ধারাবহিকতায় এ পর্যন্ত ১০টি কমিশন গঠন হলেও অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট মনে করে,

শিক্ষা সংস্কার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যকীয় একটি কমিশন কেনো গঠন হয়নি তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ইতোমধ্যে তৈরি হতে শুরু করেছে। আমরা সবাই জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সবার আগে জাতিকে সুষ্ঠু সবলভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার গত ষোল বছরে শিক্ষা এবং বিচার ব্যবস্থাসহ দেশের সকল সংস্থার অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই কাল বিলম্ব না করে সকল স্ট্যাক হোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা এখন সময়ের দাবি।

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিধ্বস্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্যে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট বারবার আওয়াজ তুলেছে এবং যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার, শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।

অনতিবিলম্বে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শিক্ষা সংলাপের আয়োজন করে। তাছাড়া শিক্ষানীতি, শিক্ষা কারিকুলাম ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে এনসিটিবি'র চেয়ারম্যান ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সাথেও মতবিনিময় করেন ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ। আগামীতে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথেও এ বিষয়ে মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্টের। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ অক্টোবর বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের একটি প্রতিনিধি দল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ডাঃ বিধান রঞ্জন পোদ্দারের সাথে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তাঁর অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এবং ট্রাস্ট মডেল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল নুরে আলম তালুকদার। সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দল উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি বলে তাগিদ দেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও প্রিন্সিপাল নূরে আলম তালুকদার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা সেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে পেরেছি। তাই এখন সময় এসেছে দেশকে ঢেলে সাজানোর। সরকার যেহেতু ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাই কালবিলম্ব না করে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি। ১০টি কমিশন গঠনের পর এবার শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ দাবি জানিয়েছেন খোদ সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আনম এহসানুল হক মিলন। বিএনপি আমলের এই প্রতিমন্ত্রী পরীক্ষার হলে নকল বন্ধে বেশ আলোচিত ছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে এডুকেশন টাইমস আয়োজিত ‘কোন্ পথে শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম সংস্কার ’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এ পর্যন্ত ১০টি কমিশন গঠন হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়নি, যা দুঃখজনক। অথচ আমরা একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন আশা করেছিলাম।

বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট গত ২৪ বছর অর্থাৎ দুযুগ যাবত দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সারা দেশের ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। এছাড়া করোনাকালে অসহায় দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্য বিতরণ। মতবিনিময়কালে ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য এবং গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ ফারুক হাসান, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ তারেক রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী দলের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলাম জিয়া, বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক (জনসংযোগ) মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন,

স্বাধীনতা পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও তা যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। আমরা চাই এই পর্যায়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন হবে, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। আমাদের দেশের শিক্ষা খাতকে সমৃদ্ধ করে ভরিয়ে তুলছে এমন উজ্জ্বল বিশেষজ্ঞ শিক্ষক আছেন প্রচুর। কিন্তু সেই শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ শিক্ষার হাব তৈরি করেছে, যেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও নষ্ট হচ্ছে। তাই এখন সময় এসেছে দেশকে সাজানোর। যেহেতু সরকার ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাই বিলম্ব না করে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। আমরা চাই এই পর্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হোক, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিক্ষা সংস্কারে কাজ করবে। দেশে নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং আদর্শবান সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। যেহেতু ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট গত দুযুগ ধরে বাংলাদেশর সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে, তাই ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধিও এ কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয় হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়