প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:২৭
ফরিদগঞ্জে বহু পুরনো পথ বন্ধ করার অভিযোগ!
উপজেলার নয়াহাটে বহু বছরের পুরনো ব্যবহৃত পথ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে সেই পথে চলাচলকারী কয়েকশ মানুষ। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। ভিতরে ভিতরে চলছে ক্ষোভ। পথের জন্য অবরুদ্ধরা প্রভাবশালীদের হাতে খেয়েছেন মার, হয়েছেন জখম। ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি। তবুও চলাচলের একমাত্র পথ খোলা হয়নি। প্রভাবশালীদের সাথে না পেরে অসহায় অবরুদ্ধরা সময় পার করছেন শত শত মানুষ। এমনটিই জানালেন ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগমসহ আরও কয়েকজন। বিষয়টির দ্রুত সমাধান চাইছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন এলাকাবাসী। ঘটনাটি উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামে।
|আরো খবর
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, শতবছর ধরে ব্যবহৃত চলাচলের পথ দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ির মানুষজনের নিয়মিত চলাফেরা। তাদের প্রতিদিনের সকল কাজে ব্যবহৃত হতো এই পথটি। এটি সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় চলাচলের জন্য স্থানীয় একজন জমি দান করেন। যাতে করে এইসকল বাড়ির মানুষের চলাচল বন্ধ না হয়। কিন্তু হঠাৎ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন দুলাল মিজি গং। এমনটিই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। পথের বিষয়ে গত কয়েক মাসে উভয়ের মাঝে একাধিকবার বিক্ষিপ্ত মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে করে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। চলাচলের পথের বিষয়ে ভুক্তভোগী অবরুদ্ধরা ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার অভিযোগ করার পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অন্যদের উপস্থিতিতে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার সালিশী সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুলাল মিয়া মিজি গংরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সালিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসহায় খেটে খাওয়া মানুষদেরকে কোণঠাসা করে রাখছে বলে অভিযোগে এসেছে। এদিকে ভুক্তভোগীরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বিগত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম, ৭নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন খান, ৮নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি আ. আজিজ পাটওয়ারী এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শারমিন আক্তারের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী গংদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে একটি সালিশী সিদ্ধান্ত হয় চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। সেই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নতুন করে পথের জন্য কেনা জায়গায়ও বেড়া এবং ঘর তুলেছে অবরুদ্ধকারীরা। এমতাবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পুনরায় ভুক্তভোগী পরিবারদের বলা হয়েছে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে।
এদিকে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান, আফছার উদ্দিন, হাজেরা বেগম, শাহজাহান মোল্লা, আক্কাস ঢালী প্রমুখ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করেছে। আমাদের বাড়ির মানুষের এবং আশেপাশের অন্যান্য মানুষজনের চলাচলের এই একটিমাত্রই রাস্তা রয়েছে। রাস্তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পথ না থাকায় আমরা সকলে মিলে তাদের থেকে চাঁদা তুলে ২ শতক জমি ক্রয় করি। যেন ভবিষ্যতে তারা কোনো কথা শোনাতে না পারে। কিন্তু তারা আমাদের কেনা জমির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। উল্টা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করে আসছে। বাহির থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমাদের মারধর করে। আমরা থানায় অভিযোগ করলেও থানাও কিছুদিন পর চুপ হয়ে যায়। আমরা কৃষিকাজ করে কোনোরকম সংসার চালাই। তাদের সঙ্গে লড়তে এত টাকা পাব কোথায়!
তারা আরও বলেন, আমাদের উপযুক্ত মেয়েদের বিয়েশাদী দিতে বেগ পেতে হচ্ছে এই রাস্তার জন্য। একজন মানুষ মারা গেলে মসজিদ থেকে খাটিয়া আনার পথটুকুও নেই। জুমার দিন মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও অনেক বাড়ি ডিঙিয়ে মসজিদে যেতে হয়। আত্মীয়-স্বজনদেরও বাধাগ্রস্ত করে তারা। আমাদের নামে তারা শুধু বদনাম আর অপপ্রচার করে। এখন তো পুরোপুরিভাবে চলাচলের রাস্তাই বন্ধ করে দিলো। আমরা আরও বিপদে পড়লাম। চলাচল করতে কষ্ট হয় বিধায় তাদের থেকেই জমি কিনেছি। এখন তারাই বাধা দেয়। স্থানীয় আলতাফ রাড়িসহ দুলাল মিয়ার ভাইয়ের থেকে জায়গা কিনেও শান্তিতে চলাচল করতে পারছি না। দুলাল মিজির মেয়ের জামাই রাজুর প্রভাবে আমরা নিরুপায়। এখন আমরা অবরুদ্ধ আছি। চলাচলে অনেক কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের অসহায়দের পাশে থেকে চলাচলের জন্য একটা সুব্যবস্থা করবেন বলে অনুরোধ করছি।
ভুক্তভোগী মো. আফছার উদ্দিন পাটওয়ারী ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে পথ অবরুদ্ধকারীদের শরীক মৃত বাদশা মিয়া মিজির মেয়ে পারভীন আক্তারের কাছ থেকে হাঁটাচলার জন্য দুই শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। যার দলিল নং ১১১৮৭/২২, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। উক্ত ক্রয়কৃত জমি সি,এস ১৯২ নং বি,এস ১০৪ নং হরিনা মৌজায় বি,এস চূড়ান্ত-২১৭ নং খতিয়ান ভুক্ত জমিনের অন্তর্গত।
উল্লেখ্য, ক্রয় করা এই জায়গাতেও জোর করে টিনের ঘর তুলে পথ বন্ধ করে দিয়েছে দুলাল মিজি।
এই বিষয়ে পারভীন জানান, আমার চাচা দুলাল মিজি যদি জায়গা পায় তাহলে অন্য দিক দিয়ে নিতে পারে, কিন্তু ওদের পথ আটকানোর কী আছে। পথ অবরুদ্ধকারী অভিযুক্ত দুলাল মিজি বলেন, এই রাস্তা দিয়ে তারা বহুবছর চলাফেরা করেছে এটা ঠিক। আমরা তাদের বাধা দেই নাই। কিন্তু এইদিক দিয়ে কোনো সরকারি রাস্তা নাই।
পথের জন্য আপনাদের শরীক থেকে জায়গা কিনেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জমি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। তারা কার কাছ থেকে জায়গা কিনছে জানি না। যার কাছ থেকে কিনেছে তারা তার কাছ থেকে জায়গা বুঝে নিবে।
ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, এই রাস্তা নিয়ে অনেকবার ইউনিয়ন পরিষদে বসা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবে দুলাল মিয়া রাস্তা দিতে রাজি হয়নি। ঐদিকে ভুক্তভোগীরাও গরীব মানুষ, তাদের পক্ষে তেমন কেউ নেই। তাদের চলাচলের জন্য এই রাস্তাটি রয়েছে। আর কোনো রাস্তা নাই।
এএসআই আমজাদ বলেন, আমি অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুলাল মিয়াকে বলেছি রাস্তা খুলে দিতে, কিস্তু সে রাজি হচ্ছে না। আমি কি করব।