প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৭
হাজীগঞ্জের একজন সৎ আর কর্মঠ কর্মকর্তার বদলি
সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা বহুজনে হয়। কাজ পাগল কজনেই হয়। যারা কাজ পাগল কারা কর্মস্থলে বেঁচে থাকেন। কর্মস্থলে নিজগুণে বেঁচে থাকা একজন সরকারি কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা। প্রায় ১৪ বছর পর সম্প্রতি সময় গাজীপুরে বদলি হয়েছেন। তাঁর বদলিকে হাজীগঞ্জের লোকজন কেঁদেছে। এই কাঁদার মূল কারণ সৎ আদর্শ আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাওয়া। কাজ করার সুবাধে পেয়েছেন জনপ্রশাসন পদকসহ অনেক সন্মান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোলাম মোস্তফা নিজগুণে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, অধনস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সেবাগ্রহিতাদের সাথে রেখেছেন সু-সম্পর্ক। হাজীগঞ্জ ছাড়ার সময় পেয়েছেন যথেষ্ট সম্মান। তিনি গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বদলীজনিত কারণে হাজীগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। গত ১২ নভেম্বর রোববার গাজীপুর জেলার টঙ্গি থানায় একই পদে যোগদান করেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে হাজীগঞ্জে যোগদান করেন মোঃ গোলাম মোস্তফা। যোগদানের পর থেকে তিনি কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন নি। সকলকে নিজের আপন মানুষ ভেবে কাজ করেছেন এবং সবাইকে এক নজরে দেখেছেন। তাই, দীর্ঘ সময়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন নি।
অবশেষে কিছু সংখ্যক জনবল পেয়ে ২০১৭ সাল থেকে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ‘প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার অ্যাপস’, ‘নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই’, ‘আলোকিত কিশোর-কিশোরী’, ‘আজকের সুস্থ কিশোরী ও নিরাপদ মাতৃত্ব আগামি দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ’ এবং ‘নাইওর’ নামের ইনোভেশন কাজ করে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। এর মধ্যে ‘প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার অ্যাপস’-এর জন্য তিনি জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন।
পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায় পেয়েছেন একাধিকবার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার। মোঃ গোলাম মোস্তফার নিজস্ব উদ্যোগে এই ইনোভেশন কাজগুলো করার কারণে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন, গর্ভবতী মায়েরা। নিয়মিত উঠান বৈঠক, চেকআপ, তদারকি ও নরমাল ডেলিভারির কারণে মায়েরা শারিরিক ও মানসিক এবং পরিবার অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে মুক্তি এবং সুস্থ মা ও শিশু পেয়েছেন। এতে কিছুটা হলেও কমে এসেছিল সিজারিয়ান মায়ের সংখ্যা।
তিনি প্রেগনেন্ট মাদার কেয়ার অ্যাপসের মাধ্যমে উপজেলার সকল গর্ভবর্তী মায়েদের তালিকা করেন। এই তালিকায় মায়েদের সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ ছিল। সেই দিন-তারিখের সূত্র ধরেই প্রসবকালীন জটিলতা ও ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবত্তোর সেবা কার্যক্রম শুরু করেন। তার আগে উপজেলার সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোকে ২৪/৭ ডেলিভারির উপযোগী করে তুলেন।
সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বদলিজনিত কারণে কোনো জেলায় বা উপজেলায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে এক প্রতিক্রিয়ায় মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার কর্মজীবনে সেরা সঞ্চয় পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা। দীর্ঘদিন এই উপজেলায় ছিলাম। কর্মরত অবস্থায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ সকলের সার্বিক সহযাগিতা পেয়েছি। ভালো থাকুক সবাই এই কামনা রইলো।