বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:২৮

অভিযান সফল করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিবর্তন প্রয়োজন

হাইমচরে জাটকা রক্ষা অভিযানের ন্যায় মা'ইলিশ অভিযান হলে ইলিশ থাকবে যাদু ঘরে

হাইমচর ব্যুরো
হাইমচরে জাটকা রক্ষা অভিযানের ন্যায় মা'ইলিশ অভিযান হলে ইলিশ থাকবে যাদু ঘরে

আসছে ১২ ই অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা করেছে সরকার। এ সময়ে দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানি চাঁদপুর ও হাইমচরের মেঘনা নদীতে আসে। আর ঠিক এ সময়ই মা' ইলিশ গুলোকে নিধন করার জন্য ওত পেতে বসে থাকে অসাধু জেলে। শুধু জেলে-ই নয় এই নিষেধাজ্ঞা সময়ে মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতি বছরের মত এবারও তারা ব্যাপক হারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইলিশ মাছ রক্ষায় উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক যতটা সচেতনতা সভা করা হয় তার চাইতেও বেশি হারে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সম্পদ ইলিশ নিধন চক্র গুলো। যা এখন চায়ের দোকানে কিংবা হাটবাজারে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে। আলোচনায় অভিযান পরিচালনাকারী প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন করে নতুন করে সাজালেই অনেকটাই জাতীয় সম্পদের রক্ষা পাবে এমনটাই আলোচনায় রয়েছে।

মৎস্যজীবীদের মতে ইলিশের লোভ সামলাতে না পারা পর্যন্ত কখনোই ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কারণ যারা ইলিশ নিধন করে এবং যারা অভিযান পরিচালনা করে উভয়ের মধ্যেই ডিমওয়ালা ইলিশের লোভ রয়েছে। যার ফলে কখনোই অভিযান সফল হয় না। অভিযান সফল করতে হলে সর্বপ্রথম সকলকে ইলিশের লোভ সামলাতে হবে। প্রতিবছর অভিযানের সময় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নো পুলিশ অভিযানে গেলে আটককৃত ইলিশ মাছগুলো মধ্য থেকে বড় সাইজের মাছগুলো চলে যায় তাদের ঘরে আত্মীয় সজনের ফ্রিজে । ছোট ছোট মাছগুলো ফটোশুট করে এতিমখানা বিলিয়ে দেয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় রয়েছে সমালোচনা। তাদের মতে অভিযানে কারো হয় সর্বনাশ আবার কারো পৌষ মাস। অভিযান সফল করতে হলে সরিষার ভেতরের ভুতটাকে আগে তাড়াতে হবে। তাই পুরনো কিংবা এর আগে এই উপজেলায় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বদলি করে নতুন কর্মকর্তা দিয়ে ট্রাস্কফোর্স কমিটিকে সাজাতে হবে। এবারও যদি জাটকা রক্ষা অভিযানের ন্যায় মা' ইলিশ অভিযান পরিচালনা হয় তাহলে ভবিষ্যতে জেলেরা দেশ ছেড়ে পালাবে। এখনতো সাধারণ মানুষের কাছে মাছ ক্রয় করা নাগালের বাহিরে তবুও ইলিশের দেখা মিলে। কিন্তু মা'ইলিশ রক্ষা না হলে ইলিশ মাছ নদীতে নয় জাদু ঘরে রাখতে হবে।

স্থানীয়আব্দুল কাদির, মেজবাহ উদ্দিন, সালাউদ্দিনসহ কয়েকজন জেলে বলেন, আজকে আমরা মৎস্য জীবিরা মাছ থেকে বঞ্চিত। এক মাত্র জাটকা অভিযানে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালণ না করায় এখন নদীতে ইলিশ নাই। আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা হ্মন মাথায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। মৎস্য অফিস, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড যদি সঠিক ভাবে এ নদী শাষন করতো তা হলে আজ আমাদের পালানোর মত অবস্থা হতো না । প্রতিটি অভিযানে বহিরাগত জেলেরা এসে আমাদের নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। বহিরাগত জেলেদের ধারে কাছেও তারা ঘেষতে পারে না। তারা অসাধু জেলেদের কাছে জিম্মি সাজে, নাকি টাকায় বিক্রি হয় সেটা তারাই ভালো জানে। তবে আমরা যতটুক জানি নদীতে অভিযানের সময় টোকেন ও বিকাশ বানিজ্যের মাধ্যমে শুধু মাছ নিধনই নয় মাছের ব্যবসাও চলে ধুমধামে । টাকার কাছে আর বড় বড় মাছের কাছে সবই অসহায়। অভিযান নামক এই নাটক বন্ধ করা উচিত। আর না হয় অভিযানের মতন অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষা করুন। তারা বলেন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড বোটের ড্রাইভাররা অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীদের সাথে বিকাশ বানিজ্য করে তথ্য আদান প্রদান করে। যতক্ষন না বিকাশ বানিজ্য বন্ধ না হবে, ততক্ষন অভিযানও সফল হবে না। এ ছাড়া অভিযানে আটককৃত মাছও এ ড্রাইভারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। তাদের অভিযান হয় বড় বড় মাছের জন্য, মাছ রক্ষার জন্য নয়। দায়িত্ববান কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে তাহলে অভিযান সফল হবে। ইলিশের বংশ রক্ষা পাবে।

জেলে প্রতিনিধি মানিক দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয়। ২০০০ সালে নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া গিয়েছিল। আর এই কারনে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ব্যান্ডিং দেয়া হয়েছে। এ তিন বছর যাবত নদীতে কোন মাছ নেই। জেলেরাও মাছ পায়না অনাহারে অদ্ধাহ থাকে। সরকার যে অভিযান অভায়াশ্রম দিচ্ছে এটা জেলেরাও মানে না, আবার যাদের দায়িত্ব আছে তারা অনেকে মানায় না। একজন জেলে যদি সকলের সাথে মিট না করে তাহলে তার পক্ষে নদীতে নেমে মাছ ধরা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, হাইমচরে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর জন্য জেলার মৎস্য অফিসের তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে। তা না হলে সরকার যেখানে জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় কোটি কোটি টাকা ব্যায় করছে সেখানে হাইমচরের মত উপজেলায় একজন অতিরিক্ত মৎস অফিসার রেখেছে। যিনি ইতিপূর্বেও হাইমচরে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিটা বছরই তার সময়ে আসাদু জেলে ও ব্যবসায়ীরা দিদারসে ব্যবসা করে গেছে। ধ্বংস হয়েছে দেশের সম্পদ। গত জাটকা অভিযানেও নদী থেকে ব্যাপক হারে জাট নিধন হয়েছে। ইতিপূর্বে এই মৎস্য অফিসার এই উপজেলায় থাকায় তার সাথে এলাকার লোকজনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে অসাধু জেলে ও অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে তার একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে এবছর সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা আটঘাট বেঁধে মাছ ব্যবসা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে হলে এই সময়ে এই উপজেলা একজন বিসিএস কর্মকর্তা প্রয়োজন। যার সাথে হাইমচরের কোন জেলে কিংবা ব্যবসায়ীর সাথে সম্পর্ক থাকবে না। এছাড়া নো- পুলিশ ও কোষ্ট গার্ডেও পরিবর্তন প্রয়োজন। নতুন ইনচার্জ নতুন ফোর্স থাকলে অভিযানে জেলে ও অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে ভয় পাবে। মা'ইলিস রক্ষা করতে হলে ট্রাস্ক ফোর্স কমিটির অভিযান পরিচালনাকারী টিমকে নতুন করে সাজাতে হবে। কারণ পুরাতন কর্মকর্তারা হয় চোখের শরমে কিছু বলবেনা, না হয় টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে। দেশের সম্পদ নষ্ট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নীলকম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মা' ইলিশ রক্ষা করা। আমাদের পুলিশের বদনাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের অভিযানের তথ্য পাচার করবে। তা হতে দেয়া যাবেনা। স্পীড ভোটের ড্রাইভার বিকাশের মাধ্যমে তথ্যপ্রচারের সংবাদটি আমাদের কাছে আছে। আমাদের এসপি স্যার এ বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরাতন ড্রাইভারদের বাতিল করে নতুন ড্রাইভার নেয়ার জন্য। আমরা ইতিমধ্যে পুরনো ড্রাইভার জামালকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। উদ্যতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তীতে ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়া হবে। এবার যেকোনো মূল্যেই আমরা দেশের জাতীয় সম্পদ মা' ইলিশ রক্ষায় অভিযানকে সফল করব।

উপজেলা কোস্টগার্ড সিসি নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের যারা নৌকার মাঝি রয়েছেন তারা পুরনো মাঝি। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য আদান প্রদান কিংবা টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। কিংবা কেউ কোন অভিযোগ করেনি তথ্য প্রমান সহ কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। পুরাতন মাজীদেরকে বদলি করে নতুন মাঝি নেয়ার বিষয়ে আমাদের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষ কোন নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত আমাদেরকে দেয়নি। তাদের নির্দেশনা পেলেই আমরা নতুন মাঝি নিব। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমরা অভিযানের আগেই একটি বড় সেমিনার করবো তারপর আপনাদের সাথে অভিযানের বিষয় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত / প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাবো।এই মুহূর্তে অভিযান সম্পর্কিত কোন কথাই আমরা বলতে পারছি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়