বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৫:১৪

ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের বলি হলেন হাবিব

প্রবীর চক্রবর্তী
ফরিদগঞ্জে অর্ধগলিত লাশের রহস্য উন্মোচন

প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের বলি হলেন আরেক পরকীয়া প্রেমিক হাবিব মৃধা (২৭)। গলায় রশি পেঁচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হয় পাশ্র্ববর্তী গুপ্তের বিলে। এই হত্যাকাণ্ডে ৪জন অংশ নেয়। অন্যদিকে খুনের শিকার হাবিরের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন ও ফাঁস লাগানো রশিটি এনে পরকীয়া প্রেমিকা শিউলী আক্তারের বাড়ির পাশের খালে ফেলে দেয় প্রধান ঘাতক রুবেল। অতঃপর মুঠোফোনে শিউলীর কাছে হাবিবকে শেষ করে ফেলার তথ্য দিয়ে সে ঢাকা পালিয়ে যায়।

গতকাল ১১ আগস্ট বুধবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হাবিব মৃধা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন পূর্বক এসব তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) সোহেল মাহমুদ পিপিএম জানান, লাশ উদ্ধারের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা খুনের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধান ঘাতক রুবেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নিহত হাবিবের মুঠোফোন উদ্ধারসহ অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দুদিন পর ১০ আগস্ট মঙ্গলবার নিহতের ভাই আকরাম হোসেন বাবুল বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন মোঃ রুবেল (৩০), সাইফুল ইসলাম (৩৩), সিফাত উল্যা রাসেল (২৭), পারভেজ হোসেন শ্যামল (২৬) এবং শিউলী আক্তার (২০)।

পুলিশ সূত্র জানায়, কুয়েত প্রবাসী ফারুক হোসেনের স্ত্রী ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের হর্নিদুর্গাপুর গ্রামের রুহুল আমিনের মেয়ে শিউলী আক্তারের সাথে একই গ্রামের মৃত মনির মৃধার ছেলে হাবিব মৃধা এবং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে মোঃ রুবেল, হেজবুত উল্ল্যার ছেলে সিফাত উল্ল্যা রাসেলসহ বেশ ক’জনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এই পরকীয়ার সম্পর্কের কারণে হাবিব মৃধা, রুবেল, রাসেলের সাথে দ্বন্দ্ব বাঁধে। রুবেল ও রাসেলকে শিউলীর জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয় হাবিব মৃধা। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল হাবিবকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

গত ৪ আগস্ট বুধবার রাতে রুবেল হাবিবকে মুঠোফোনে পাশের গুপ্তের বিলের ব্রীজের পাশে ডেকে নেয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুবেলের সহযোগী সাইফুল ইসলাম নাইলনের রশি দিয়ে হাবিবের গলা পেঁচিয়ে ধরে। এ সময় অপর সহযোগী রাসেল ও শ্যামল তার হাত চেপে ধরে এবং রুবেল পা চেপে ধরে। শ^াসরোধ করে হত্যার পর তাকে গুপ্তের বিলে ফেলে দেয়। পরে হাবিবের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও নাইলনের রশিটি শিউলী আক্তারের বাড়ির পাশের খালে ফেলে দিয়ে খুনের ঘটনাটি শিউলী আক্তারকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করে রুবেল।

পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৯ আগস্ট সোমবার প্রথমে শিউলী আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়। পরে তার তথ্য মতে রুবেলকে ঢাকার উত্তরা থেকে ওই রাতে আটক করে মঙ্গলবার সকালে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে মঙ্গলবার দিনভর অভিযান চালিয়ে অপর তিন সহযোগী সিফাত, শ্যামল ও রাসেলকে তাদের এলাকা থেকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ডুবুরি দিয়ে শিউলী আক্তারের বাড়ির পাশের খাল থেকে হাবিরের একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, তারা গতকাল বুধবার আটককৃত ৪ জনকে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার গৃহবধূ শিউলী আক্তারকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তিনি জানান, আশা করছি এই হত্যাকাণ্ডের আরো অনেক কিছু জানা যাবে পরবর্তীতে অভিযুক্তদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে।

তিনি জানান, নিহত হাবিব মৃধার বিরুদ্ধে অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মাদক এবং অপরগুলো মারামারির। আমরা জেনেছি, সে ভাড়ায় মারামারি করতে যেতো। তবে হত্যকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মোঃ রুবেলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে। আমরা লাশ উদ্ধারের পর বিগত ৪৮ ঘণ্টা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নেতৃত্বে। অবশেষে আমরা এর হত্যারহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হলাম।

তিনি বলেন, আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদ হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুবেল ফরাজী।

উল্লেখ্য, ৮ আগস্ট রোববার সন্ধ্যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর দুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্তের বিল থেকে হাবিব মৃধার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ।

নিহত হাবিরের বড়বোন রোকেয়া বেগম জানান, গত ৪ আগস্ট বুধবার দুপুরে হাবিব মৃধা মুঠোফোনে কল পেয়ে চাঁদপুরস্থ তার আরেক বোন মরিয়মের বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। পরে বাড়ি থেকে এক/দেড় কিলোমিটার দূরের গুপ্তের বিলে লাশ পাওয়ার সংবাদ শুনে এসে তিনি ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। দুদিন পর নিহতের ভাই আকরাম হোসেন বাবুল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়