প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:১৬
হোটেল বয়ের কাজ করে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে আরিফ
হোটেল বয়ের কাজ করা আরিফ হোসেন (১৮) চলিত বছর অনুষ্ঠিতত্ব আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার জন্য আসছে ৩১ সেপ্টেম্বর হোটেলের চাকুরী ছেড়ে দিচ্ছে। বাড়িতে থেকে একটু ভালো প্রস্ততির জন্য তার চাকুরী ছাড়ার কারনে বলে নিশ্চিত করে আরিফ নিজেই। সে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার মরহুম আলহাজ্ব হজরত মাওলানা আঃ রহিম সাহেবের বাড়ির শাহ আলম মিজির ছেলে। হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকার মোহাম্মদিয়া হোটেলে কাজ করছে। সে উপজেলার নওহাটা ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা আলীম পরীক্ষার্থী।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষার পড়ার জন্য চাকুরী ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয় আরিফ। চাকুরী করাকালীন সময়ে রাতে হোটেলের ঘুমানো রুমে যে টুকু শরীরে কুলায় সেই টুকুই পড়ে। তবে পরীক্ষার প্রস্ততি বেশ ভালো বলে জানায় আরিফ। আরিফ দাখিলে ২.৬ জিপিএ পেয়েছে। আলিমে আরো ভালো ফল হবে বলে আশাবাদী সে। তবে পড়ালেখা ও মা-বাবার জন্য করা চাকুরীটা তাকে ভালোভাবে পড়ালেখার সুযোগ করে দিতে পারেনি। গরীব বলে তার যতো কষ্ট। তবে হোটেলের মালিক ভালো তাই হয়তো কাজের পাশাপাশি পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে জানায় আরিফ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, আরিফ ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। সবার বড় বোন তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাইদের মধ্যে বড়রা সবাই সবারভাবে চলছে। বাবা অসুস্থ ও বেকার। আরিফ নিজে বাবা-মাকে দেখাশুনা করে। হোটেলে চাকুরী করে মালিকের উপর খেয়ে ৭ হাজার টাকা বেতন পায়। এই টাকা বর্তমান সময়ে কিছুই না তারপরেও তার জন্য এই টাকাই বেঁচে থাকার অবলম্বন। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য চাকুরী ছেড়েছে ঠিকই কিন্তু পরীক্ষা পর্যন্ত কিভাবে চলবে এটাই এখন আরিফের মাথাব্যাথা।
আরিফের কর্মস্থল মোহাম্মদীয় হোটেলে কথা হলে আরিফ তার এই বয়সের ব্যাপক চরাই-উৎরাইয়ের কথা অনায়াসে জানায় সে। যে টুকু মনে পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় ৮/১০ কৃষকের মতো অন্যের জমিতে মজুরি হিসেবে কৃষি কাজ শুরু করে। সেই থেকে অন্যের কাজ করে করে পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মায়ের ভরন-পোষনের দায়িত্ব নেয়। মাঠে কৃষি কাজের পাশাপাশি ধান মাড়াইয়ের মেশিনে কাজ করেছে বহু দিন। কাজ আর পড়ালেখা নিয়ে বাড়ির পাশে নওহাটা ফাজিল ডিগ্রী মাদাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় দিয়ে পাশ করে সে। আলিমে ভর্তি হয় একই মাদ্রাসায়। করোনায় মাদ্রাসায় তেমন একটা যেতে হয়নি তাই কৃষি কাজ ছেড়ে খাবার হোটেলে বয়ের চাকুরীতে যোগ দেয় আরিফ।
আরিফ আরো জানায়, ১ হাজার টাকা দিয়ে ফরমপূরন করেছি। পড়ালেখা করতে গিয়ে মাদ্রাসা থেকে কিতাব পেয়েছি আর শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছি। তবে প্রয়োজনীয় সুযোগ পেলে হয়তো অনেক ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারতাম। হোটেলে সারাদিন কাজ করার পর পড়ার জন্য শরীরে আর শক্তি থাকেনা। একটু ভিন্ন বিষয়ে আরিফ বলেন, আমি সুযোগ পেলে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে পড়ালেখা করবো। প্রয়োজনে আরো পরিশ্রম কববো কোন সমস্য নেই আমার জন্য।
আরিফের প্রতিবেশী ও বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, আরিফকে বিনাবেতনে পড়ার জন্য নওহাটা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। তার বাবা অসুস্থ থাকায় তাকে ১০ টাকা কেজির চাল ও আরো আগে কার্ড দেওয়া হয়েছে।