রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ : ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। সেই গ্রামেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বুধবার জন্মগ্রহণ করেছিলো এক শিশু। বাবা শেখ লুৎফুর রহমান ও মা শেখ সায়েরা খাতুন আদর করে ডাকতেন খোকা বলে। সেই ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট খোকাই একদিন তার নিজ মেধা, কর্মদক্ষতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ও নেতৃত্বের গুণে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু মুজিবের নেতৃত্বের বড় সার্থকতা বাঙালি জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রীয় সত্তায় সমৃদ্ধ করা।

শুক্রবার ১৫ আগস্ট ’৭৫ সাল। ফজরের আজান শুরু হয়েছে মাত্র। রাতের অন্ধকারের শেষ রেশটুকু ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে। সেই কালো রাতে ঘাতকের দল এগিয়ে এলো ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটাবার জন্যে। অভিশপ্ত ১৫ আগস্ট। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতের দিন, যা এখন ‘জাতীয় শোক দিবস’।

সারা জাতি আজ ১৫ আগস্ট শোকে মুহ্যমান, বেদনায় নীরব, নিস্তব্ধ। ১৯৭৫ সালের এমনি এক অভিশপ্ত দিনের সুবেহ সাদেকে একদল তস্কর খুনি, দুষ্কৃতকারী, পাষ- এয়াজীদের বংশধর নিমকহারাম মীর জাফরের প্রেতাত্মা রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের অরক্ষিত ঐতিহাসিক ‘বঙ্গবন্ধু ভবনে’ হানা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রামের অন্যতম প্রেরণাদাত্রী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাঁদের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামাল, মেঝো ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, ছোট ছেলে শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে।

একই রাতে তস্কর খুনি দল হানা দেয় বঙ্গবন্ধু সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী অবিসংবাদিত কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। সেখানে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার শিশু ছেলে আরিফ, কিশোর মেয়ে বেবী, নাতি ছোট শিশু সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু এবং ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আত্মীয় আবু নাঈম রিন্টুকে। মারাত্মকভাবে আহত করে সেরনিয়াবাতের স্ত্রীকে। তস্কর চক্র আরো হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং জাতীয় যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তাঁকে রক্ষা করতে এলে ৩২ নম্বর রোডের মুখে ঘাতক চক্র আরো হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর এককালীন সামরিক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল জামিলকে।

পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম ও বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ঘাতকচক্র একই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপরীত দিকে প্রবাহিত করার কাজ শুরু হয়। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সুবেহ সাদেকে বাঙালির নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রাঃ) এবং তার পরিবারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। স্মরণ করিয়ে দেয় ১৭৫৭ সালে মুর্শিদাবাদে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর চক্রের হাতে নির্মমভাবে শহীদ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিয়োগান্তক ঘটনা।

’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি রোডস্থ ৩২ নম্বরের অরক্ষিত নিজ বাসভবনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ইশারায় বিশ্বাসঘাতক স্বাধীনতা বিরোধী কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে শাহাদাতবরণ করেন। আবারো একবার বাংলার মাটিতে রচিত হলো বেঈমানির নির্লজ্জ ইতিহাস।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ক্ষমতার লোভে নবাব হবার আশায় বেঈমানি করেছিলো তাঁরই সেনাপতি ও পরম আত্মীয় মীর জাফর আলী খান। ১৯৭৫ সালে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো রাষ্ট্রপতি হবার খায়েশে মুজিবের রাজনৈতিক সহচর, ঘনিষ্ঠ বন্ধু (!) ও মন্ত্রী পরিষদ সদস্য কুমিল্লার খন্দকার মোশতাক। মীর জাফর ও খন্দকার মোশতাকের পরিণতি বাংলার মানুষ দেখেছে। বিশ্বাস হত্যাকারীর আত্মীয়-স্বজনও আজ তাদের স্মরণ করে না। উভয়ের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিলো স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। স্বাভাবিক মৃত্যু ও দাফন তাদের ভাগ্যে জোটেনি। তাদের উভয়ের সাঙ্গপাঙ্গগণ আমৃত্যু পলাতক ও নিন্দিত জীবনযাপন করেছে। অধিকাংশ সাঙ্গপাঙ্গ লাভ করেছে অভিশপ্ত মৃত্যুর স্বাদ।

পক্ষান্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান চিরকাল বেঁচে থাকবেন ৫৫ হাজার বর্গমাইলের সবুজ শ্যামল এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের মাটি ও মানুষের হৃদয়ে। বাংলাদেশের মতোই শাশ্বত চিরায়ত ও দেদীপ্যমান বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সকল দুরভিসন্ধি আজ দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু তাদের সেই বিশ্বাসঘাতকতা, উচ্চাভিলাষী ধ্যানধারণা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। সূর্য অস্তমিত হলে তারপরও জোনাকিরা জ্বলে। কিন্তু জোনাকিরা কখনোই সূর্যের বিকল্প হতে পারে না। যতোই দিন যাচ্ছে এ সত্য স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। বাংলাদেশকে মুছে ফেলতে না পারলে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকেও মুছে ফেলতে পারবে না।

পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর বিখ্যাত কবিতায় বঙ্গবন্ধু মুজিবের মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে বলেছেন, ‘রাজ ভয় আর কারা শৃঙ্খল হেলায় করেছে জয়/ফাঁসির মঞ্চে মহত্ত্ব তব তখনো হয়নি ক্ষয়। বাংলাদেশের মুকুট বিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ/প্রতি বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তক্ত তাজ।’

২৫ মার্চ ১৯৭১ হানাদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু মুজিবের নামেই বাংলার মুক্তি পাগল বীর সন্তানেরা ৯টি মাস দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিলো। পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ তাঁরই দিকনির্দেশনায় এবং নামে পরিচালিত হয়। তিনিই প্রথম বাঙালি সরকার প্রধান যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করায় এবং এর ভিত্তিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুজিব বাঙালি জাতির ইতিহাসে ‘জাতির পিতা’ রূপে অমর হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নিতে হলে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সৈনিকদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। নূতন প্রত্যয়ে বলীয়ান ও দীপ্ত হয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। আর তাণ্ডই হবে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ জাতির সর্বোৎকৃষ্ট সম্মান প্রদর্শন।

অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান : সভাপতি, চাঁদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা সংস্থা, চাঁদপুর জেলা। মুঠোফোন : ০১৭১৬-১৭৭৬২৫।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়