প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
ধর্মীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস মতে, আদি মানব ও মানবী আদম ও হাওয়া মতান্তরে মণু ও শতরূপা পরবর্তী ধারাবাহিক মানব অভ্যুদয়ের দিন-ক্ষণ-দণ্ড-পল কিছুই আমাদের জানা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের আশীর্বাদে কৌশলটা আমাদের রপ্ত। স্ত্রী-পুরুষের দৈহিক মিলনে, পুরুষ স্পার্ম মেয়েদের দেহ থেকে নির্গত স্পার্মের আকর্ষণে তৈরি হয় জাইগোট। জাইগোট থেকে ভ্রুণের উৎপত্তি হয়। এই ভ্রুণই হলো ভবিষ্যৎ মানব শিশু। জীবন চক্রের ২৭০ দিন মাতৃগর্ভে অতিবাহিত করে, নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ লগ্নে ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সিডিউল অনুযায়ী সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। এতে অপেক্ষাকৃত কম প্রসব বেদনা অনুভূত হয়। মা হবার পূর্ব মুহূর্তের প্রসব বেদনার তীব্রতা মা ব্যতীত সকলের অনুভূতির অতীত। আর তাই ধর্মের হুঁশিয়ারি আছে, ‘মায়ের পদতলেই সন্তানের বেহেস্ত’।
সন্তানের প্রাথমিক সার্বিক নিরপত্তা বিধানে মায়ের ‘শাল দুধ’ অপরিহার্য। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ শিশুর একমাত্র খাদ্য হিসেবে স্রষ্টা প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর সুস্পষ্ট ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। প্রতিটি সন্তানের জীবনের শুরুটা কিন্তু বাবার মাধ্যমে। রক্তের সাথে রক্তের অদৃশ্য আকর্ষণ সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে। এজন্যই বাবার উচ্চারণ ‘আয় খোকা কোলে আয়’। এমনতো বাবা ছাড়া আর কেহ ডাকে না! এজন্যই ‘মা’ দিবসের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববারে ‘বাবা’ দিবস পালিত হয়। ধারাবাহিক প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে কৃত্রিমতায় সন্তান বেড়ে ওঠার কারণে পূর্ণ বয়স্ক সন্তানেরও মনোবৃত্তিতে কিছুটা বিকারত্ব জেগেছে। যার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ‘বৃদ্ধাশ্রম’। যা প্রাচীন বাংলায় প্রচলিত পিতৃ-মাতৃভক্তি রীতিকেই উপহাস করার সামিল। আধুনিক বাংলায় এমন অনেক অঘোষিত বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে, যা সত্যি বাংলার ঐতিহ্যবাহী রীতির কলঙ্ক। অপরিণামদর্শী যৌবন জোশে মানুষ বেসামাল হয়ে কত কিছুই না করে। কিন্তু পরিণামদর্শী বিগত যৌবন হুঁশে অনুতপ্ত হয়েও কিছু করার থাকে না, তখন আফসোস আর আফসোস।
কৃত্রিমতা বিবর্জিত মায়ের মাতৃত্বের স্বাভাবিকতা এবং পিতার পিতৃত্বের স্বাভাবিকতার ধারায় বর্তমান বিরাজিত বিকৃত সামাজিক অবস্থা থেকে আমরা অব্যাহতি পেতে পারি।
মনে রাখা প্রয়োজন, এই অনন্য সংস্কৃতি মণ্ডিত বাংলায় এমন এক লোকজ সংস্কৃতি বিরাজমান যা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।