প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
আজ ১ জুলাই শুক্রবার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা অনুষ্ঠান। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা উৎসব কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা। পঞ্জিকা অনুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী আজ পহেলা জুলাই প্রথম রথযাত্রা শুরু। এ বছর সাচার জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৪তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রাচীন এ রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে উন্মাদনায় মেতে ওঠেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পরে রথযাত্রা উৎসবে শামিল হবেন কচুয়ার তথা দেশ-বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ। ইতিমধ্যেই সাচার জগন্নাথ ধাম রথযাত্রার সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১০ দিন ধরে চলবে এ উৎসব। গত দুবছরে কোনো রকম আড়ম্বর ছাড়াই পালিত হয়েছিলো রথযাত্রা। সে কারণে এবারে মহাসমারোহে লক্ষাধিক ভক্তের সমাবেশ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দির কমিটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ পহেলা জুলাই শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গল আরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজনকীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকেল ৪টায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে রথ টেনে পশ্চিম বাজারে আনা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় আরতিকীর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস জানান, গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে আমরা কোনো রকম নিয়ম রক্ষার্থে স্নানযাত্রা ও রথযাত্রা উৎসব পালন করেছি। আশা করছি এবার স্বমহিমায় ফিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে রথযাত্রা উৎসব পালন করবো। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং দেশ-বিদেশের জগন্নাথ দেবের ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় জগন্নাথ দেবের পুনঃনির্মিত ভবন নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আশা করছি এবারের রথযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটবে। তাই এ বিশাল ভিড়কে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক ভলান্টিয়ার থাকবে। এছাড়া আগত ভক্তবৃন্দের জন্যে পানি এবং প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রথযাত্রা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ গোপ জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এ জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। গত দুই বছর করোনার কারণে নিয়ম রক্ষায় রথযাত্রা উৎসব পালনের পর এ বছর ফের পূর্ণোদ্যমে হতে চলছে সাচার জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৪ বছরের প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব। আর এ উৎসবটিকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। সে লক্ষ্যে আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পুলিশের পাশাপাশি আমাদের মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে রথযাত্রার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শ’ বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন হিন্দু তীর্থস্থান ভারতের পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে জগন্নাথ দেব গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাইরে আমরণ-অনশন করেন। অনশনের ক’দিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দিঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দিঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিকভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।