প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়ক নিয়ে বিপাকে নৌ মন্ত্রণালয়
জায়গা চেয়ে দুদফা চিঠি পাঠালেও সাড়া দেয়নি রেলওয়ে
চাঁদপুর মাদ্রাসা ঘাটে নির্মিত হতে যাচ্ছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক নৌ টার্মিনাল। প্রকল্প পরিচালকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ২০২৪ সালে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আধুনিক এই নৌ টার্মিনালটি। কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরু থেকে। নৌ টার্মিনাল আধুনিক হলেও টার্মিনালে পৌঁছার সংযোগ সড়ক আধুনিক হবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরণের শঙ্কা।
|আরো খবর
বিশ^ ব্যাংকের এই মেগা প্রকল্পটির অর্থ ব্যয়ের খাতে আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি টার্মিনালে পৌঁছার সংযোগ সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করে টার্মিনাল উপযোগী করে গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসা ঘাটে যেতে যে সড়ক দু’টি ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত সরু। একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রবেশ করলে বিপরীত দিক থেকে কোনো গাড়ি ক্রসিং হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। তার ওপর বেশ কয়েকটি ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির বাঁকের কারণে সড়কটিতে গাড়ি চলাচলে হিমশিম খেতে হয় চালকদের। চাঁদপুরের বর্তমান লঞ্চঘাটে (মাদ্রাসা ঘাট) পৌঁছার দুটি সড়কের একটি পশ্চিম শ্রীরামদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে মাদ্রাসা রোড ও অপরটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে যাওয়া জামতলা রোড।
আপাতত জামতলা রোডটি চাঁদপুর নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়ক হিসেবে প্রশস্তকরণ ও আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা করছে নৌ-মন্ত্রণালয়। কিন্তু সড়কটির অধিকাংশ ভূ-সম্পত্তি রেল মন্ত্রণালয়ের হওয়ায় তা নিয়ে বিপাকে চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প ও নৌ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করার জন্য রেলওয়ের কাছে জায়গা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে নৌ মন্ত্রণালয় থেকে। দুই দফা চিঠি প্রেরণের পরও সাড়া মেলেনি রেল মন্ত্রণালয় থেকে।
প্রকল্প পরিচালক হাসান মাহমুদ সেলিম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, চাঁদপুর আধুনিক নৌ বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। ইতোমধ্যে প্রারম্ভিক সকল কাজ সস্পন্ন করে নকশাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়কটি প্রশস্তকরণ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ^ব্যাংকের বরাদ্দে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের পৃথক খাত রয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি প্রায় সম্পূর্ণই রেলওয়ের জায়গায় রয়েছে। রেলওয়ে জায়গাটি নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর না করলে রাস্তা ছাড়াই নৌ টার্মিনালের কাজ শেষ করতে হবে।
‘জায়গা চেয়ে রেলওয়েকে চিঠি দেয়া হয়েছে কি-না’ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, দু দফা পৃথক চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির আলোকে রেলওয়ে প্রতিনিধি দল জায়গাটি পরিদর্শনও করেছেন। টেবিলের পর টেবিল ফাইল চালাচালি হয়েছে, কিন্তু কোনো ইতিবাচক সায় দেয়নি রেল মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প পরিচালকের দাবি, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি। চাঁদপুরের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়, নৌ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম এমপি মহোদয় হস্তক্ষেপ করলে ভূমি হস্তান্তরের দীর্ঘদিনের সমস্যাটি সমাধান হবে বলে আমার বিশ^াস।
রেল ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ভূমি হস্তান্তরের জটিলতা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে কথা বলা হয় চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য নৌ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সাথে। তিনি বলেন, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান থাকাকালীন তিনিসহ আমি ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মিলে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর টার্মিনালের উদ্বোধন করেছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে আমি সভাপতিত্বও করি। সেদিন রেল মন্ত্রণালয়ের ভূমি হস্তান্তর জনিত কোনো সমস্যার কথা উত্থাপিত হয়নি। হলে হয়তো এতদিনে সমাধান হয়ে যেতো। যাইহোক, চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে বিষয়টি যেহেতু আমি অবগত হয়েছি দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সাথে আমি পৃথকভাবে কথা বলবো। চাঁদপুরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে রেলওয়েকে এতোটুকু সেক্রিফাইসতো করতেই হবে।
ভূমি হস্তান্তর নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে কথা বলা হয় নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে। তিনি জানান, জায়গা চেয়ে রেলওয়ের কাছে চিঠি প্রেরণের পরও কোনো পজিটিভ রেজাল্ট আসেনি এ কথা সত্যি। তবে আমরা শীঘ্রই এই বিষয়টি নিয়ে তিন মন্ত্রণালয় নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মিটিংয়ে বসবো। সড়ক, রেল ও নৌ এই তিন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আশা করি চাঁদপুরের সমস্যাটি নিরসন হবে।
রেল মন্ত্রণালয় থেকে আদৌ ভূমি হস্তান্তর করা হবে কি-না সে বিষয়ে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি না হলেও আশার কথা শোনালেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে ফোনালাপে মন্ত্রী জানান, আমরা মন্ত্রণালয়গুলো একে অপরের পরিপূরক। যদি নৌ-মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত জায়গাটি আমাদের (রেল মন্ত্রণালয়ের) বড় কোনো অপারেশনের জন্য কাজে না লাগে, তবে জনগণের স্বার্থে তা অবশ্যই হস্তান্তর করা হবে। আমরা দুই মন্ত্রণালয় বসে এটি মিউচুয়াল করে নিবো।