প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ফরিদগঞ্জের ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের কর্মকার বাড়ির একটি বসতঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্টি গ্রামের পূর্ব কর্মকার বাড়ির বীরেশ্বর কর্মকারের বসতঘরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বসতঘর পুড়ে অন্তত ২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের। এ ব্যাপারে ঘরটির মালিক বীরেশ^র কর্মকার বুধবার ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বসতঘরে আগুনের ঘটনা শোনার পরপরই গত বুধবার (২০ অক্টোবর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)। বিস্তারিত জেনে জেলা প্রশাসক ইউএনওকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী চয়ন কর্মকার জানান, গভীর রাতে কুকুরের ডাকচিৎকারে আমার ঘুম ভাঙ্গে। উঠে দেখি বীরেশ্বর কর্মকারের ঘরটিতে আগুন জ্বলছে। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও পরে রামগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন।
দুই ছেলে, এক মেয়ের জনক বীরেশ্বর কর্মকার জানান, তিনি চাঁদপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসেন। কিন্তু ঘরে থাকতেন না। ঘরের বাইরে একটি বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়া ভেতরে বিদ্যুৎ ছিলো না। সকালে তিনি এসে দেখতে পান মূল ঘর ও রান্না ঘরটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
রাজিব কর্মকার নামে আরেকজন জানান, তার ঠাকুরমা সীতারাণী কর্মকার এবং পাশের আরেক ঠাকুরমা রাধারাণী কর্মকারের কাছ থেকে তিনি আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনেছেন। তারা জানান, বয়স হলেও ঘরটিতে আগুনের ভয়াবহতা তাদের ভীসন্ত্রস্ত করে তোলে।
রাধারাণী কর্মকার জানান, ওইদিন রাতে বাইরে প্রথমে কুকুরের প্রচ- ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনেছেন। পরে তার ছেলে চয়ন কর্মকার আগুন লাগার কথা জানালে বাইরে এসে দেখেন বীরেশ^র কর্মকারের ঘরটি চারিদিক থেকে দাউ দাউ করে জ¦লছে।
স্থানীয় ক’জন লোক জানান, তারা ঘরে আগুন লাগার ডাকচিৎকার শুনে ছুটে এসে আগুন নেভানোর কাজ করেছেন। এটি কীভাবে ঘটলো তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বিদ্যুৎজনিত না কেউ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে তা নিয়ে সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, ওই বাড়ির কুকুরগুলো ঘরের আগুন দেখে না কোনো আগন্তুক দিখে চিৎকার করেছিলো, তা বিশ্লেষণের বিষয় রয়েছে। আগুন নেভানোর সময় বিপ্লব ও রিপন নামের দুজন বৈদ্যুতিক শক পান বলে বাড়ির কয়েকজন নারী বৃহস্পতিবার ফরিদগঞ্জের এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তাঁর কাছে জানিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে আগুনের ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ) সার্কেল সোহেল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার প্রমুখ।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ হারুনুর রশিদ (সাগর), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, ভাইস চেয়ারম্যান জিএস তছলিম, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান, জেলা পরিষদ সদস্য মশিউর রহমান মিটু, সাইফুল ইসলাম রিপন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গণি বাবুল পাটওয়ারী, স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি আঃ সাত্তার পাটওয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মোহাম্মদ শাহআলম, উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হিতেশ শর্মা, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক নারায়ণ রবিদাস, যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব গণেশ লোধ প্রমুখও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে রামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের (ডিজিএম) নূরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থল ফরিদগঞ্জ উপজেলার হলেও এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে রামগঞ্জ গ্রীড থেকে। অগ্নিকা-ের ঘটনাটির সূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির কাছে আমরা প্রতিবেদন দিবো।
এদিকে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদ হোসেন জানান, অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত বীরেশ^র ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা তার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।
অগ্নিকা-ের বিষয়ে ঘটনাস্থলে এসে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) সাংবাদিকদের জানান, আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করছি। তবে প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন জানিয়েছেন, শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের লোকজন প্রকৃত আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। এছাড়া এ বাড়িতে সার্বক্ষণিক দুজন পুলিশ প্রহরা থাকবে। একই সাথে পুলিশের একটি টিম আশপাশের এলাকায় ডিউটি করবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অগ্নিকা-ের ঘটনা দুঃখজনক। ঘটনা সম্পর্কে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে টিনসহ সহায়তা দিবো।