শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

উচ্ছৃঙ্খল ধর্মান্ধ ও সমাজবিরোধীরাই অন্য ধর্মে আঘাত হানে : হুইপ
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

গত বুধবার রাত ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে পূজামণ্ডপ ভাংচুরের ঘটনায় ৪জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় রাতেই হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব হাজীগঞ্জে টহল অব্যাহত রেখেছে। নিহত ৩ জনের বাড়ি হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া গ্রামে ও অপরজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ ঘটনার পর থেকে হাজীগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জে ভাংচুরকৃত মন্দির পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করাই অপশক্তির কাজ। অপশক্তিই উস্কানি দিয়ে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে লিপ্ত রয়েছে। কোনো সুস্থ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, যে ধর্মেই বিশ্বাস করুক, তিনি কখনো অন্য ধর্মের উপর আঘাত হানতে পারে না। সবসময় উশৃঙ্খল ও ধর্মান্ধ এবং সমাজবিরোধীরাই অন্য ধর্মের উপর আঘাত হেনে সমাজকে কলুষিত করতে চায়। অপশক্তির সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। যে সমস্ত উশৃঙ্খল ব্যক্তি এই অপশক্তির প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে এখানে (হাজীগঞ্জ) এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ধৌত বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করবো।

চট্টগ্রামের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই এই আনন্দ উপভোগকে যারা বাধাগ্রস্ত করেছে, তারা যে একটা অপশক্তি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই অপশক্তি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

তিনি আরো বলেন, শত শত বছরের ঐতিহ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এই অসাম্প্রদায়িকতার যাত্রা। মুসলিম লীগ কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতো। পরবর্তীতে জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ অনুসরণ করে আমরা অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠিত করবো। যারাই সাম্প্রদায়িক আচরণ করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।

হাজীগঞ্জে ৪ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফায়ার (গুলি) করতে পারে। যখন মানুষের সম্পদ ও জীবনের উপর আঘাত এসেছে, তখন সঙ্গত কারণেই এবং আত্মরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফায়ার করেছে। এরপরেও এই বিষয়টির এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে।

এই ঘটনায় মামলা দায়ের এবং হাজীগঞ্জে ৭ জনকে আটকসহ কুমিল্লার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে। কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল), হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিডি (উপ-পরিচালক)।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হাসান, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) মোঃ সোহেল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন ও পৌরসভা মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটাঃ আহসান হাবীব অরুণসহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার বিষয়কে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় কিছু তরুণ, কিছু যুবক সমাজ ও কিছু মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া পূজামণ্ডপ অতিক্রমকালে মিছিল থেকে কে বা কারা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পূজাম-পের গেট ভাংচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে করে কিশোরসহ মোট ৪ জন নিহত ও ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ পুলিশের ১৭ জন সদস্য আহত হয়।

নিহতরা হলেন : হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আল-আমিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মোঃ বাবলু (৩৫)।

অপরদিকে গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন : হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মোঃ মনির হোসেনের ছেলে মোঃ সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মোঃ সিদ্দিকের ছেলে মোঃ হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত মিলন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়