শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার চুরি হয়ে যাওয়া রডের সন্ধান মিললো বড়ালীতে

সাংবাদিকদের উপস্থিতির পর সরিয়ে নেয়া হয়

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার চুরি হয়ে যাওয়া রডের সন্ধান মিললো বড়ালীতে

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ফরিদগঞ্জ পৌরসভার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ২২ টন রড চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া রড-কাণ্ড নিয়ে উপজেলাজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর গোপন তথ্যের মাধ্যমে সাংবাদিকরা কিছু চোরাই রডের সন্ধান পান। পৌরসভার রড চুরির বিষয়টি এতোটাই ওপেন সিক্রেট যে, ঠিকাদার, পৌর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন এমনকি পুলিশ প্রশাসনও জানে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কেউই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঠিকাদারও অদ্ভূত কারণে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

এই রড চুরির তথ্য যেভাবে বের হয়ে আসে

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের দেওয়ান বাড়ির বোরহান উদ্দিন দেওয়ানকে কম দামে রড কেনার প্রস্তাব করেন একই এলাকার দেলোয়ার ঠিকাদার। বাজার মূল্য থেকে প্রায় পনেরো হাজার টাকা কমে রড পাচ্ছেন বোরহান উদ্দিন। তাই দেরি না করে ৭৮ হাজার টাকায় ১ টন রড কিনে রাখেন তিনি। ৭ আগস্ট পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালী দেওয়ান বাড়িতে চোরাই রড নিয়ে আসেন পাশের বাড়ির আবদুর রহিম সরকার। আবদুর রহিম নসিমন চালক হলেও এই চোরাই রড চক্রের সাথে সেও জড়িত আছে বলে সূত্র জানায়। রড ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতা করেন সাইফুল দেওয়ান ও ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন। তাদেরই সহযোগিতায় চোরাই রড ক্রয় করেন প্রবাসী বোরহান উদ্দিন। বোরহান উদ্দিনের বাড়ির দ্বিতীয়তলার ছাদের কাজের জন্যে এই চোরাই রড ক্রয় করেন ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে নসিমন দিয়ে রড সরিয়ে নেয় চক্রটি। বোরহানের ভগ্নিপতি আবদুল বারেক মিজিও একজন ঠিকাদার। তার বাড়ি উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের দায়চারা গ্রামে। ঝামেলা এড়াতে তারা ভগ্নিপতি বারেক মিজির কাছে রড পাঠিয়ে দেয়।

সূত্র জানায়, সে তার চলমান কাজে রডগুলো ব্যবহার করে। এদিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকরা বারেক গাজী বাড়ি এবং এলাকায় অনুসন্ধান করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। মধ্যস্থতাকারী ঠিকাদার দেলোয়ার বলেন, সাইফুল ও আবদুর রহিম আমার কাছে এই রড নিয়ে এসেছে। আমি মনে করেছিলাম কোনো ঠিকাদারের কাজের পর কিছু রড রয়ে গেছে। আর ওরা সেগুলোই বিক্রি করতে আনছে। তাই কম মূল্যে প্রায় ১ টন রড ৭৮ হাজার টাকায় কিনে দিয়েছি বোরহানকে। আমি জানতাম না এগুলো চোরাই রড। আমি একাধিকবার রহিমের কাছে জানতে চেয়েছি এই রডের মালিক কে? সে বলেনি। সাইফুল বলেন, ভাই রড রহিম এনেছে। আমি শুধু লেবার হিসেবে নামিয়ে দিয়েছি। সব কিছু রহিম জানে। আমি রহিমের কল পেয়ে বাড়ি থেকে আসি। সে কোথায় থেকে রড এনেছে জানি না।

আবদুর রহিম বলেন, ভাই আমি গাড়ি চালাই, সংসার চালাই। ফরিদগঞ্জ বাজারের টিএন্ডটির সামনে এক লোক আমার গাড়িতে এই রড দিয়েছে। বলেছে বিক্রয় করে টাকা দিতে। তাই বিক্রয় করেছি। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তাকে চিনি না। দেখলে চিনবো। আর কিছু জানি না। বোরহানের স্ত্রী বলেন, ঠিকাদার কোথা থেকে রড এনে দিয়েছে আমরা জানি না। আমরা টাকা দিয়ে রড কিনেছি। কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, জানতে চাইলে বলেন ৭৮ হাজার টাকা। বারেক গাজী বলেন, ভাই আমি চোরাই রডের ঘটনা শুনেছি, কিন্তু আমি নেইনি বা আমার কাছে কেউ পাঠায়নি। যে বা যারা আপনাদের তথ্য দিয়েছে তারা ভুল তথ্য দিয়েছে।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মোহাম্মদ হানিফ সরকার বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ দায়ের হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।

পৌর প্রশাসক এ.আর.এম জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের পৌরসভার ভেতরে কিছু ঠিকাদারের রড ছিলো, আমি যোগদানের আগেই রডগুলো চুরি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ হয়নি। তথ্য পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যে রাখা চুরি হওয়া রডের সাথে উপজেলা এবং পৌর বিএনপি ও যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসে। অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তা সম্পন্ন হলে রড চুরির সাথে কারা জড়িত আছে পাঠক জানতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়