শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কামরুল ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
ফরিদগঞ্জে সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কামরুল ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে

ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর এলাকায় এক সাংবাদিক নামধারীর নামে চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জানা যায়, তিনি আগে ঢাকায় ছিলেন। গত এক বছর আগে এলাকায় এসে সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্নজন থেকে চাঁদাবাজি করছেন। এই নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গত এক বছর নিজেকে সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন আবার বিএনপি সেজে গেছেন বলে এলাকার অনেকে জানান। সর্বশেষ তিনি গত বৃহস্পতিবার এলাকার সোনা মিয়া কবিরাজ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। সোনা মিয়া কবিরাজ এতো টাকা কোথায় থেকে দিবেন এই চিন্তায় ঐদিন সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাক করে বসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেছেন সোনা মিয়া কবিরাজের ছেলে কাদির।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে অভিযোগ আসলে কথিত সাংবাদিক কামরুল ইসলাম রনির বিষয়ে ও তার চাঁদাবাজির বিষয়টি কতটুকু সত্য তা জানতে উপজেলার গাজীপুর এলাকায় যান ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কয়েকজন সদস্য। এ সময় গাজীপুরে কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে চান না। তবে এলাকায় তাদের চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জন শোনা গেছে।

থানায় অভিযোগকারী কাদিরের বাড়িতে গেলে সেখানে চাঁদাবাজদের বিষয়ে কথা বলার জন্যে অনেকে এগিয়ে আসেন। এ সময় কাদির বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ কামরুল তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল্লাহ এবং বিএনপি নেতা বিল্লাল সহ আমাদের ঘরে আসেন। আমার বৃদ্ধ বাবা সোনা মিয়া কবিরাজ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ঐদিন সন্ধ্যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা, বাকি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা কিস্তিতে দিতে বলেন। এ সময় আমি ও আমাদের ঘরের অন্যরা তাদের এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেন। পরে আমার বাবা সারাদিন এসবের টেনশনে রাতে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। পরে বাবাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানকার ডাক্তারেরা বাবাকে সাথে সাথেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে আমার বাবা সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে আইরিন বেগম, পিঞ্জিরা বেগম, আছিয়া বেগম নামের তিন জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কামরুল, শহিদুল্লাহ, বিল্লাল এরা এলাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করতেছেন। সর্বশেষ আমার বাবার কাছে তারা ৫ লাখ টাকা চান। আমার বাবা ওই টাকার চিন্তায় স্ট্রোক করে বসেন, বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, এই তিন জনের চাঁদাবাজির কবল থেকে আমাদের রক্ষার জন্যে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

এলাকার সাবেক মেম্বার মাহবুব বলেন, কামরুল আসলেই সাংবাদিক না, তিনি সাংবাদিক দাবি করেন। তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের খারাপ অকারেন্স করে আসছেন। ইতিপূর্বে তিনি কয়েকবার এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। চাঁদাবাজির পাশাপাশি তিনি মাদকের সাথেও যুক্ত। আগে শুনেছি তিনি আওয়ামী লীগ ছিলেন, কিন্তু গত পাঁচই আগস্টের পরে এখন আবার তিনি বিএনপি হয়ে গেছেন বলে দাবি করছেন। সোনা মিয়া কবিরাজের কাছে তারা তিনজনে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে শুনেছি। এ সময় উৎসুক জনতা এই চাঁদাবাজদের উপযুক্ত বিচার চান বলে স্লোগান দেন।

অভিযুক্ত কথিত সাংবাদিক কামরুলের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টার পরও তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুন পাঠান বলেন, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের অধীনস্থ যেসব সাংবাদিক আছেন, আমার বিশ্বাস, এরা কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নন। ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রত্যেক সাংবাদিক তাদের নিজ নিজ কর্মব্যস্ততা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোনো চাঁদাবাজির সাথে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যরা জড়িত নন। তিনি বলেন, উল্লেখিত নামধারী সাংবাদিক কামরুল ইসলাম রনি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য নন। প্রশাসনিকভাবে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, অভিযুক্ত কামরুলের সাথে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে বলবো, সে জঘন্য কাজ করেছে। প্রশাসনকে বলবো, তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সেই সাথে যারা তাকে সহযোগিতা করছে তাদেরকে সর্তক থাকার আহ্বান করছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য এমন কাজের সাথে জড়িত নন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়