রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

বহু প্রতীক্ষিত ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প কাজ

শহর এলাকার অবকাঠামোসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে

মোঃ মিজানুর রহমান ॥
শহর এলাকার অবকাঠামোসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে

চাঁদপুর শহর রক্ষায় বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেলে মেঘনা পাড়ের ভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলোর দুঃখ ঘুচবে। বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে থাকা চাঁদপুর শহর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধের জন্যে ৮২৭ কোটি টাকার প্রকল্প কাজ সম্প্রতি উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ২০২৭ সালে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর চাঁদপুর। পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত নদী বন্দর চাঁদপুর। এই নদীকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে দেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক এলাকা এবং নদী বন্দর। এই নদী যেমন চাঁদপুর শহরবাসীর জন্য আশীর্বাদ, অন্যদিকে দুঃখও বটে। এর কারণ নদী ভাঙ্গন। চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী, চাঁদপুরের দুঃখ পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙ্গন।

নদীর এ কূল ভাঙ্গে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা/সকাল বেলা আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যে বেলা। বাংলার ইতিহাসে বিয়োগান্তক ও মর্মাান্তিক এক কালজয়ী গান। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চাঁদপুর শহরকে ভাঙ্গছে মেঘনা নদী। প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। নদীর অনন্য রূপ চাঁদপুর শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রায় যোগ করেছে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধ।

নদীর ভাঙ্গনের মধ্যে বহু ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিল কারখানা বসতঘর, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা রাস্তাসহ মূল্যবান অনেক স্থাপনা হারিয়েছে। কেউ নদীগর্ভে বসতঘর হারিয়েছেন চারবার, কেউ হারিয়েছেন পাঁচবার। নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট মেঘনার ভাঙ্গনের মুখে। চাঁদপুর শহরবাসীর প্রাণের দাবি, তাদের প্রিয় চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় এখানে যেনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং সেই বাঁধকে ঘিরে নদীবেষ্টিত শহর এলাকা যেন পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং তিনবারের মন্ত্রী বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধকে টেকসই এবং দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ সফল হতে চলেছে।

ইতোমধ্যে ডাঃ দীপু মনি এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৮২৭ কোটি টাকার মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষার্থে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ব্লক প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এতে খুশি শহরবাসী।

নদী ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স ও যুব ব্যবসায়ী সমিতি এবং অন্যান্য সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে শুরু করে নদী ভাঙ্গন রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিল বহুকাল যাবত। আজকে টেকসই সেই স্বপ্নের শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। এজন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চাঁদপুর শহর মেঘনাপাড়ের নদী ভাঙ্গনগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবার, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আনন্দিত এবং স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির এলাকার বাসিন্দা বিশু বণিক বলেন, তাদের এলাকা পাঁচবার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। ভাঙ্গনে অনেক পরিবার বাড়িঘর ও বসতভিটা সব হারিয়েছে। অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে অন্যের স্থানে। পৈত্রিক স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে এখনো অনেক পরিবার বাঁধের পাশেই নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন টিলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তপুরা বেগম বলেন, আমার ছেলে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালায়। নদী ভাঙ্গন রক্ষায় যে বাঁধ দেয়া হয়েছিল, সেটিও কয়েকবার ভেঙে গেছে।

ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজার ট্রলারঘাট সংলগ্ন দেওয়ান ব্রাদার্সের কেয়ারটেকার মোঃ নূরু জানান, তার মালিকের অনেক মূল্যবান ব্যবসায়িক স্থাপনা অনেক আগেই মেঘনার ভাঙ্গনে নদীগর্ভে চলে গেছে। অবশিষ্ট অংশ সেটিও ভাঙ্গনের মুখে।

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, শহরের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, সচেতন মহল, পর্যবেক্ষক মহল, যারাই আছেন সবার দাবি চাঁদপুর শহরকে যেনো নদীর ভাঙ্গন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করা হয়। তাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে। এত বড় অর্থ ব্যয়ের প্রকল্প পাস হওয়ায় তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বেঁচে থাকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের এমপি ও মন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও চাঁদপুর শহরের সিনিয়র সিটিজেন আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমাদের একটাই দাবি ছিল নদী ভাঙ্গন রোধ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সদর আসনের সংসদ সদস্য মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সহযোগিতায় আজ প্রকল্প পাস হয়েছে এবং এর কাজও চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সবার জন্যে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করবো।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপায় এবং আমাদের দীপু আপার একান্ত প্রচেষ্টায় নদী ভাঙ্গন কবলিত শহর এলাকাকে রক্ষায় এই প্রকল্পটি পাস হয়েছে। এত বড় প্রকল্প আগে কোনো জনপ্রতিনিধি সরকারের মাধ্যমে নিতে পারেনি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নদী ভাঙ্গন কবলিত শহরবাসীর স্বপ্নের দাবি পূরণ হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাসান ইমাম বাদশা বলেন, ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুরবাসীর নয়নের মণি। তিনি চাঁদপুর সদর আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য। নদীবেষ্টিত চাঁদপুর এলাকাকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় তিনি অনেক প্রকল্প এনেছেন এবং কাজ করিয়েছেন। এখন ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয় চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের বড় ধরনের কাজ হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কখনো চাঁদপুরবাসী কল্পনাও করেনি। এসব বড় বড় কাজগুলো আমাদের মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির কারণে হয়েছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ আমাদের দীপু আপার প্রতি চাঁদপুরবাসী কৃতজ্ঞ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল ইসলাম চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, বহু প্রতীক্ষিত চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের (চলতি বছর) ১৫মে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির শুভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু করেছি। ১৯টি প্যাকেজের এ বছর সাতটি প্যাকেজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজে শহর রক্ষাবাঁধের মোলহেড ও পুরানবাজার হরিসভা পয়েন্টে বালু ভর্তির জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য প্যাকেজের কাজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ২০২৭ সালের মধ্যে আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।

এক নজরে ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প

২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৮২৭০২.০০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ওই বছর ডিসেম্বর মাসেই প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকাল অক্টোবর, ২০২৩ হতে জুন, ২০২৭ পর্যন্ত। প্রকল্পের নাম চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প-এর আওতায় নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : ১) চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতির মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ বাস্তবায়নপূর্বক চাঁদপুর শহরের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও জনপদ, মূল্যবান জমিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো ইত্যাদির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পুনরুজ্জীবিত করা। ২) ইতঃপূর্বে বাস্তবায়িত ৩৩৬০ মিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজকে পুনর্বাসন করে চাঁদপুর শহরকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে স্থায়ীভাবে রক্ষা করা। ৩) প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৫.৫০ লক্ষ মানুষকে সরাসরি নদী ভাঙ্গন হতে ঝুঁকিমুক্ত করা।

প্রকল্পের প্রধান অঙ্গসমূহ : নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ ৩৩৬০ মিটার (নতুন বাজার মেঘনা নদী-১২৫০ মিটার, নতুন বাজার ডাকাতিয়া নদী-৪৮০ মিটার, পুরাণবাজার মেঘনা নদী-১৪৩০ মিটার, পুরাণবাজার ডাকাতিয়া নদী-২০০ মিটার)। সীমানা দেয়াল নির্মাণ ০.৪৮৬ মিটার। বনায়ন ৩১৩০টি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়