সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২১, ০০:০০

রঘুনাথপুরের নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ১ ডজনেরও বেশি মামলা
গোলাম মোস্তফা ॥

নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে চাঁদপুর শহরতলীর বড় রঘুনাথপুর গ্রামের সরদার বাড়ির নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে ১ ডজনের বেশি মামলা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ৭টিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরতলীর বড় রঘুনাথপুর গ্রামের সরদার বাড়ির মোহাম্মদ আলী সরদারের বড় ছেলে নূর মোহাম্মদ সরদার ২০০১ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার একটি গার্মেন্টেসে চাকুরি নেন। এ সুবাদে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে ৩/৪ বছরের মধ্যে খুচরা জুট ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন পর স্ত্রী, সন্তান ও ছোট দু ভাইকে নিয়ে যান নারায়ণগঞ্জে। ছোট দু ভাইকে দিয়ে খুচরা জুটের ব্যবসাটি করান। আর নিজে প্রভাবশালী অর্থশালীদের নজরে আসার কাজে লিপ্ত থাকেন। একপর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিচয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দর উপজেলার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার খালিদ ওবায়েদ উল্লাহ (যার পরিচয় দেশব্যাপী মিয়া সোহেল)কে কৌশলে পটিয়ে তার বাসার ভাড়াটিয়া হিসেবে পরিবারের সদস্যের নিয়ে বসবাস করেন। সময়-অসময়ে বিভিন্ন ছল-চাতুরির মধ্য দিয়ে বাড়ির মালিক ও তাঁর স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠতা করেন। এমনকি এই ঘনিষ্ঠতাকে বন্দরের ব্যবসায়ীদের দেখানোর জন্যে বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করে তিনি মিয়া সোহেলের পরিবারের সদস্য এমন পরিচয় বন্দরে তুলে ধরে শুরু করেন ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা। একের পর এক হাতিয়ে নেন বিভিন্ন অজুহাতে কোটি কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, মিয়া সোহেল ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে কৌশলে কয়েক দফায় ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকার তাগাদা দেয়ায় তিনি কৌশলে ওই বাসা থেকে বের হয়ে সামনের বিল্ডিংয়ে ভাড়া উঠেন। কয়েকদিন পর হঠাৎ রাতের আঁধারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা থেকে লাপাত্তা হন।

এদিকে পাওনাদাররা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মিয়া সোহেলের কাছে গিয়ে তার স্বজন মনে করে প্রতারণার বিষয়টি অবহিত করেন। এই ঘটনার বিরুদ্ধে শুরু হয় একের পর এক মামলা। এগুলো হচ্ছে : সিআর ৬১৬/২০ স্মারক নং-২৯০, সিআর ৬১৭/২০ স্মারক নং-২৯১, সিআর ৬১৮/২০ স্মারক নং-২৯২, সিআর ৪৫৭/২০ স্মারক নং-২৮৯৭, সিআর ৪৫৮/২০ স্মারক নং-২৮৯৮, সিআর ৫০০/২০ স্মারক নং-৯৬। সিআর ৮৯/২০ মামলাটি করেন আলী আহমেদ ভূঁইয়া ১০ লাখ টাকা পাওনা হওয়ায়, জনৈক রেহানা আক্তার ১০ লাখ টাকা পাওনায় সিআর মামলা করেন, যার নং-৩১৯/২০। ইমন খান ১৫ লাখ টাকা পাওনায় সিআর মামলা নং-৩২০/২০ করেন। এছাড়াও টানবাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ১৮ লাখ, চাঁদপুরে পৈত্রিক বাড়ি বন্দরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ১৫ লাখ টাকা পাওনার জন্যে মামলা করেন। প্রতিটি সিআর মামলার বাদীর কাছ থেকে নূর মোহাম্মদ ব্যাংক একাউন্টের চেক দিয়ে টাকা নেন। অথচ তিনি নিজের নাম লিখতে কলম ভাঙ্গেন। বন্দর থানায় ব্যবসায়ীদের করা ২৫টির মতো জিডি রয়েছে। এমনকি সপরিবারে বাসাভাড়া করে সেখানে থেকে ভাড়ার টাকা না দেয়ায় বাড়ির মালিকও মামলা করেছে থানায়।

ভয়ঙ্কর এই প্রতারককে খুঁজে বের করতে মামলার পাশাপাশি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মিয়া সোহেল চাঁদপুরের সন্তান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলারদের শরণাপন্ন হন। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুর সাথে পূর্ব থেকেই ভালো সুসম্পর্ক থাকায় তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। প্রতারক নূর মোহাম্মদের ছবি দেখিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর গত বছরের এপ্রিল মাসে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নূর মোহাম্মদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে উল্লেখিত টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তাকে মিয়া সোহেলের ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধের জন্যে বলা হলে, সে ও তার পরিবারের সদস্যদের অনেক অনুরোধের পর ১ মাসের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা দিবে এই মর্মে নূর মোহাম্মদ, তার বাবা-মা, স্ত্রী লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন, কিন্তু পরক্ষণে আবারো লাপাত্তা হয়ে যান।

গত ৩/৪ মাস পূর্বে নূর মোহাম্মদ সাবেক ফুটবলার মিয়া সোহেলের বিরুদ্ধে চাঁদপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। এ মামলার আইনজীবী অ্যাডঃ জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী। মামলার খবর পেয়ে মিয়া সোহেল জামিন নিতে আসলে চাঁদপুরের সন্তান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা মূল ঘটনা বাদী পক্ষের উক্ত আইনজীবীকে অবহিত করেন।

ঘটনার বিস্তারিত জেনে অ্যাডঃ জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী নিজেই হতবাক হয়ে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে দেয়া অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী টাকা পরিশোধের কথা বলেন। এক পর্যায়ে চাঁদপুরের স্থানীয়দের অনুরোধে আরো ৫ লাখ টাকা কম দিয়ে টাকা পরিশোধের জন্যে বলা হলে তিনি একমাস পর টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পুনরায় লাপাত্তা হয়ে যান।

এদিকে নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে দায়েরকৃত এক ডজনেরও বেশি মামলার মধ্যে ৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আদালতের এই আদেশ চাঁদপুর সদর মডেল থানায় প্রেরণ করা হয়। আদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনিও নাকি তাকে খুঁজে পাননি। অথচ নূর মোহাম্মদ চাঁদপুর শহরের জিটি রোডে আলিশান ফ্ল্যাট বাসায় সপরিবারে রাজকীয়ভাবে বসবাস করছেন। চাঁদপুরে তার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারে রয়েছে কাঁচামালের ব্যবসা, যা তার স্বজনরা পরিচালনা করে। এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হঠাৎ করেই নূর মোহাম্মদ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন, যা কল্পনা করার মতো নয়।

একটি গোপন সূত্র থেকে জানা যায়, পূর্ব শ্রীরামদী গফুর মিয়াজী বাড়ির জাহাঙ্গীর মিজি (পিতা হাতেম মিজি), যিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানির অর্থ আত্মসাতে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন, তিনি হলেন নূর মোহাম্মদের মূল সহযোগী। এই জাহাঙ্গীর মিজির মাধ্যমে নূর মোহাম্মদ চাঁদপুরের জনৈক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে এখন রাজকীয়ভাবে জীবনযাপন করছেন। তাই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা তার এহেন অপকর্মের বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়