প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আবারো বালু উত্তোলন ও বিক্রি
চরাঞ্চলবাসীর ভিটেমাটি রক্ষায় ড্রেজার সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে বিশাল মানববন্ধন
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চরাঞ্চলের ভাঙ্গন কবলিত লোকজন। বালুখেকোদের হাত থেকে নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় মেঘনা নদীরপাড়ে স্মরণকালের বিশাল এ মানববন্ধনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও চরাঞ্চলের নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ৪ জুন মঙ্গলবার সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষার জন্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ও বালু উত্তোলনকারী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থাসহ নদীতে তার ড্রেজার সন্ত্রাস বন্ধের জোরালো দাবি জানানো হয়।
ভাঙ্গন কবলিতরা জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রশাসন ও আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় গত প্রায় দু বছর ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখে। কিন্তু কিছুদিন ধরে আবারও তিনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। এতে করে নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের ক’জন ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলেন, আমরা চাই নদীতে তাদের বালু সন্ত্রাস বন্ধ করে আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষা করতে। নদী ভাঙ্গনের কবলে যারা পড়েছেন শুধু তারাই বুঝবেন এ কষ্ট কেমন। তাই বালুখেকোদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করে তাদের হাত থেকে রাজরাজেশ্বরসহ চাঁদপুরকে রক্ষা করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই।
এদিকে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, কারা অবৈধভাবে বালু কেটে নিচ্ছে, তা অনেকেই জানেন। এতে করে আমাদের ইউনিয়নের বাড়িঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গতকালও তাদের বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে গেলে তারা আমাদের ক’জনকে বেদম মারধর করেছে। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের নাম ভাঙ্গিয়ে দিন-রাতে বালু কাটে। কখনো তারা বলে সরকার তাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস আমাদের জানিয়েছে বালু উত্তোলনে কোনো বৈধতা নেই। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করার জন্যে যা যা করণীয় আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে করবো।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান রাজ্জাক চোকদার, চাঁদপুর জেলা যুবলীগের সদস্য ঢালী মোঃ শুক্কুর, ইউপি মেম্বার শফিক কুড়ালী, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরবত আলী গাজী, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুকুম আলী সরদার ও লিটন দেওয়ান, স্থানীয় মুরুব্বী সুফিয়ান পাটোয়ারী, হাফেজ দেওয়ান, হারুন ঢালী, এরশাদ ঢালী, হানিফা ঢালী, উপজেলা যুবলীগের সদস্য শাহজালাল বন্দুকশী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের আলোচিত ও সমালোচিত সেই ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান উচ্চ আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ পদ্মা-মেঘনার বালু আবারো উত্তোলন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নদীতে ড্রেজার বসিয়েছে। এবার আদালতের চোখ ফাঁকি দিতে চেয়ারম্যান তার মেয়ে সেলিনা আক্তারের নামে (লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা নজির খানের স্ত্রী) নিপা এন্টারপ্রাইজের নামে আদালত থেকে একটি অনুমোদন বাগিয়ে আনেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
নতুন করে আদালতের নাম ভাঙ্গিয়ে সে রাজরাজেশ্বর চর এলাকায় গত বেশ কিছুদিন যাবত নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রিতে ড্রেজার সন্ত্রাস শুরু করে। অসংখ্য ড্রেজার দিয়ে বালু কাটছিলো সেলিম খান ও তার লোকজন।
৩ জুন সোমবার প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে তার সেই বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয় এবং মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে অর্থদণ্ড আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের সময় মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বালু উত্তোলন ও বিক্রির প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকাও জব্দ করা হয়েছে। আবারো সেলিম চেয়ারম্যানের বালু উত্তোলন ও বিক্রির ঘটনা এখন চাঁদপুরের টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে।