প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুরের রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
বাঙালি চেতনার দুই শাশ্বত বাতিঘর হলো বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এ বছর কবিগুরুর একশ’ তেষট্টিতম এবং জাতীয় কবির একশ’ পঁচিশতম জন্মবার্ষিকী। এই দুই মহান কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গত ১৭ মে বিকেল পাঁচটায় জোড়পুকুর পাড়স্থ সাহিত্য একাডেমী মিলনায়তনে জমে উঠেছিল কবি-সাহিত্যিক, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মিলনমেলা। সাহিত্য একাডেমীর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকে নিবেদন করে আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তনের শিল্পীদের পরিবেশিত সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে, যার নির্দেশনায় ছিলেন সংগঠনের অধ্যক্ষ রফিক আহমেদ মিন্টু।
‘সৃজনে মননে বিকশিত হোক শাশ্বত বাঙালিয়ানা’ এই নান্দনিক আবেদনকে প্রতিপাদ্য করে দুই মহান কবির জয়ন্তী উদযাপন উৎসবে পরিণত হয়। তীব্র দাবদাহ এবং নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোলকে ছাপিয়ে সাহিত্য একাডেমী মিলনায়তন ভরে উঠেছিলো সাহিত্য অনুরাগীদের পদচারণায়। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং একাডেমীর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপ্রধানে আলোচনায় অংশ নেন বরেণ্য সাংবাদিক ও সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক কাদের পলাশ এবং মতলব ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও চাঁদপুর নজরুল গবেষণা পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেন।
স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া চাঁদপুরে রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষের সাথে নজরুলের সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং সবাইকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্যে ধন্যবাদ জানান। আলোচক সাইদুজ্জামান খুব চমৎকারভাবে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের প্রভাবকে ফুটিয়ে তোলেন। কাজী শাহাদাতের বক্তব্যের বিষয় ছিলো চাঁদপুরে নজরুল। তিনি তথ্য-উপাত্তসহ চাঁদপুরে নজরুলের আগমন ও অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন এবং কবি নজরুল সড়ক নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরেন। সভাপতির বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান পূর্ববর্তী বক্তাদের বক্তব্য সমন্বয় করে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল বিষয়ে চর্চিত কুতর্ক ও অজ্ঞানতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে কোনো অবস্থাতেই তুলনা করার মতো নয়। তাঁরা দুজনেই নিজ নিজ অবস্থানে স্বতন্ত্র ও বিশ্বখ্যাত।
আলোচনা শেষে সংগঠনের সভাপতি মুক্তা পীযূষের নির্দেশনায় দুই কবিকে নিবেদন করে বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ শিল্পীদের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে। এরপরেই শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। কেউ দুই কবিকে নিবেদন করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন আর কেউ দুই কবির লেখা কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে অংশ নেন যথাক্রমে কবি ইকবাল পারভেজ, খান ই আজম, মোখলেসুর রহমান ভূঁইয়া, সুমন দত্ত, জাহিদ নয়ন, ফয়সাল মৃধা, সাদ আল আমিন প্রমুখ। এ সময় কবি-সাহিত্যিকের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কবির মিজি, মাইনুল ইসলাম মানিক, আব্দুল্লাহহিল কাফী, আব্দুল গণি ও পলাশ দে। সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জীবন ও কর্ম বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য সামীম আহমেদ খান এবং তত্ত্বাবধানে ছিলেন কবি-গবেষক ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন অফিস সহকারী মাসুদ দেওয়ান। দীর্ঘ বিরতির পরে সাহিত্য একাডেমীর আয়োজনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপনের মধ্য দিয়ে আবারো সৃজনে-মননে জেগে উঠলো আলোকের ঝর্ণাধারা।