প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে খাজুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি আবারো দখলের চেষ্টা
ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। প্রায় দু বছর পূর্বে ওই চক্রটি স্কুলের সম্পত্তিতে টিনের বেড়া দিয়ে দখল করার চেষ্টা করে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করলে তারা দখল প্রক্রিয়া থামাতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রায় দুবছর পর পূর্বের দখল চেষ্টার স্থানেই মাটি ভরাট করছে একই গোষ্ঠী। গত তিনদিন ধরে মাটি ভরাটের ঘটনার দুদিন পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ২২ এপ্রিল সোমবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। যদিও দখলকারীরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের সিংহ পরিবারের রেখে যাওয়া সম্পত্তি দখল করতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। সম্প্রতি আরো কয়েকটি সম্পত্তি দখল প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এসব সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা নেই বললেই চলে এমন অর্ভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের ৩১০ খাজুরিয়া মৌজায় সিএস ৪৪৬, বিএস ৩৭১ দাগে খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ১ একর ৭৮ শতাংশ দলিলীয় ও রেকর্ডকৃত ভূমি। শ্রী দীপক বরণ রায় (মনু সিংহ নামে পরিচিত) বিদ্যালয়ের জন্যে এ সম্পত্তি দান করেন। যার পূর্বে দোল মন্দির, পশ্চিমে পুকুর, দক্ষিণে গড় (পানি প্রবাহের সরু খাল বিশেষ), উত্তরে দাতা নিজ চৌহুদ্দি উল্লেখ করে দেয়া আছে। এই সম্পত্তিটি বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে।
স্থানীয় আলী হোসেন গং উক্ত সম্পত্তি গত দুবছর পূর্বে দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে থানা পুলিশ ও প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। গত তিন/চার দিন ধরে ওই চক্রটি আবারো দখল প্রক্রিয়া শুরু করে। তারা আগের স্থানেই মাটি ভরাট করে চলছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আলী হোসেন গং মাটি ভরাট করে চলছে। তাদের এই কাজকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চিহ্নিত মহল।
গুপ্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ ইলিয়াস বেগ বলেন, আমার জন্মের পর থেকে এই সম্পত্তি স্কুলের দেখে আসছি। আমি নিজেও ২০ বছর এ স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলাম। স্কুলের সম্পত্তি যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, সরকারি দলের লোকজনের মদদে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের এক সময়ে প্রতাপশালী সিংহ পরিবারের সম্পত্তি দখলে গোপনে গোপনে নানা চক্রান্ত চলছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে সিএনজি স্ট্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে দখল কাজ চলছে। যেহেতু সিংহ পরিবারের কেউ নেই, তাই তাদের সম্পত্তি বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের।
এদিকে স্কুলের সম্পত্তি দখল বিষয়ে অভিযুক্ত আলী হোসেন বলেন, এই সম্পত্তি আমার বাবার নামে ১৫ শতাংশ লীজকৃত এবং পাশে আমি ৪ শতাংশ জমি কিনেছি। ‘বিদ্যালয়ের সম্পত্তি হলে তা লীজ হলো কীভাবে?’ এমন প্রশ্নে বলেন, আমি বলেছি, আপনারা বিদ্যালয়ের সম্পত্তি আমিন দিয়ে পরিমাপ করে দেখেন। যদি এ সম্পত্তি বিদ্যালয়ের হয় আমি ছেড়ে দেবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত বলেন, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দখল নিয়ে আদালতে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় ২২ এপ্রিল সোমবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম মঙ্গলবার জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর আলী হোসেনকে কাজ বন্ধ করার সাথে সাথে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্যে বলেছি।
এদিকে গত তিন বছর পূর্বে দীপক বরণ সিংহ (মনু সিংহ) মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের কোনো উত্তরসূরি না থাকায় সিংহ পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানায়। কেউ কেউ ভুয়া দলিল সৃজন করে সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছে। কেউ আবার প্রশাসনের নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে রাতের আঁধারে ধীরে ধীরে সম্পত্তি গ্রাস করছে। এসব সম্পত্তি রক্ষার জন্যে সাধারণ মানুষ দাবি জানিয়েছে।