প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে দুই শিশুকন্যাসহ মায়ের আত্মহনন
প্ররোচনার অভিযোগে স্বামী আটক
স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত এই সন্দেহে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই মেয়েসহ ফাতেমা আক্তার সীমা (২৬) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। করুণ এই ঘটনা ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামে ঘটে। এই ঘটনার শিকার দুই শিশুকন্যা হলো আরিফা (৪ বছর) ও আরিয়া (২ বছর)। আত্মহত্যাকারী ফাতেমা আক্তার সীমা পুটিয়া গ্রামের সদ্য প্রবাসফেরত আরিফ হোসেন রাঢ়ীর স্ত্রী ও হাইমচর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর গ্রামের মোস্তফা কোতোয়ালের মেয়ে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করে। স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে স্বামী আরিফ রাঢ়ীর বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর গ্রামের মোস্তফা কোতোয়ালের চর্তুথ সন্তান ফাতেমা আক্তার সীমার সাথে ৭ বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জের পুটিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম রাঢ়ীর ছেলে আরিফ হোসেন রাঢ়ীর বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই শিশুকন্যা হলো আরিফা (৪ বছর) ও আরিয়া (২ বছর)। দুবাই প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরপরই তার প্রবাসে ফিরে যাওয়ার কথা।
আরিফ হোসেন রাঢ়ী জানান, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী ফতেমা আক্তার সীমা তার দুই সন্তানকে খাওয়াচ্ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর চালের বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। পরে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের পিছন দিকের জানালা দিয়ে দেখতে পান তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলে রয়েছে। এ সময় চিৎকার দিলে মাসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘরের দরজা ভাঙ্গলে তিনি নিজেই তিনজনের ঝুলন্ত লাশ রশি কেটে নামিয়ে খাটের মধ্যে শুইয়ে দেন।
প্রতিবেশীদের ধারণা, মা ও দুই মেয়ের এই মৃত্যু রহস্যজনক। পরকীয়া সন্দেহে মা দুই মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিতের পর নিজে আত্মহত্যা করেছে, না স্বামী আরিফ হোসেন রাঢ়ী নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে-- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার প্রকৃত রহস্য বের করা উচিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আরিফ হোসেন রাঢ়ীর ঘরে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমা (২৬), ৪ বছরের শিশু আরিফা ও ২ বছরের শিশু আরিয়ার নিথর দেহ ঘরের খাটে পড়ে রয়েছে। বাইরে শত শত উৎসুক জনতা। উপস্থিত লোকজন এই মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছিলেন। এদিকে ঘটনার পর গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা আরিফ রাঢ়ীর পরিবার ও তাদের স্বজনদের কাছে সংবাদ সংগ্রহে বাধার সম্মুখীন হন। এক পর্যায়ে আরিফ রাঢ়ীর পক্ষ ও তার শ্বশুর পক্ষের লোকজনদের মধ্যে কয়েক দফা মারামারি হয়। পুলিশকে এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ীর সাথে তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমার সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই সকালে এই ঘটনা ঘটে।
ফাতেমা আক্তার সীমার মা শাহিনুর বেগম জানান, মেয়ে ও দুই নাতনির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছি। সোমবার রাতেও মেয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছি। তদন্তের মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান জানান, মঙ্গলবার সকালে আরিফ রাঢ়ীর ঘরের বিছানায় মা ও দুই মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। এছাড়া ঘরের ফ্যানের সাথে একাধিক দড়ি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলো। ঘটনা কী এবং কেনো ঘটেছে তদন্তসাপেক্ষে তার রহস্য বের হবে। এছাড়া আত্মহত্যাকারী ফাতেমা আক্তার সীমার বড় বোনও প্রবাসে ইতিপূর্বে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। ওই পরিবারের এই ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না তাও তদন্ত করা প্রয়োজন।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার সীমার পিতা মোস্তফা কোতয়াল বাদী হয়ে জামাতা প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে দ্রুত পুটিয়া গ্রাম থেকে আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে আটক করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণের পর আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। তবে তদন্তের প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে আনা হবে।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ঘটনার সংবাদ শুনে আমি নিজেসহ একদল পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সেই সময় আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর থেকে সে আমাদের নজরেই ছিলো। বুধবার (১০ এপ্রিল) ৩০৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পরই তাকে আটক করা হয়।