রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

হাইমচরে মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি ॥
হাইমচরে মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা

হাইমচর উপজেলার সবচাইতে বড় মাছের আড়ত চরভৈরবী মাছ ঘাট। সেখানে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। জেলেরা অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করে এনে এ আড়তে ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করার মত ঘটনা ঘটে আসছে প্রায় ১ মাস যাবৎ। ২ থেকে ৪ ইঞ্চির এ মাছগুলো নিধন করে ইলিশ মাছের বংশ নির্বংশ করছে এ অসাধু জেলে ও আড়তদাররা। প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি, মৎস্য অফিস কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো প্রকার ভূমিকা না থাকায় এ নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের মাঝে রয়েছে সমালোচনা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত জাটকাগুলো বিক্রি করা হচ্ছে আড়তে। নদী থেকে ট্রে ভরে মাছ এনে আড়তের ডালায় ঢেলে ডাক তোলেন আড়তের সরকার। মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকের মাধ্যমে মাছগুলো ক্রয় করে মাছে বরফ দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে। মাইকিং করে বাড়ি বাড়ি গিয়েও বিক্রি করতে দেখা যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় জেলে মোঃ মিলন বেপারী বলেন, আমরা বৈধ জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরি। বৈধ জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেলে প্রশাসনের লোক আমাদের বৈধ জাল কেটে দেয়, মারধর করে। যারা অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে তাদের কিছু বলে না। আমরা বৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারি না। মাঝ চরের, বরিশাল, মহনপুরের জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে গুঁড়া গুঁড়া জাটকাগুলো ধরে এনে চরভৈরবী আড়তে বিক্রি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আড়তের এক সরকার বলেন, গত এক মাস ধরে এখানে ছোট ছোট জাটকাগুলো বিক্রি হচ্ছে। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মণে মণে জাটকা বিক্রি হয়। প্রশাসনের লোকজন মাঝে মধ্যে এসে ঘুরান দিয়ে চলে যান। কে শুনে কার কথা। টাকার লোভে আড়তদাররাই জেলেদের নদীতে নামিয়ে জাটকা মাছগুলো ধরাচ্ছেন। জেলেরা মাছ এনে তাদের আড়তে বিক্রি করছেন, আড়তদাররা কমিশন পাচ্ছেন।

জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য মানিক দেওয়ান বলেন, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন মাছের আড়ত, উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে এই আড়তে আসতে সর্বোচ্চ ১৫ মনিট সময় লাগে। তাদের নাকের ডগায় এ জাটকাগুলো এভাবে ধ্বংস হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক। তারা বেচতে না দিলে তো আর তারা এভাবে প্রকাশ্যে বিক্রি করতে পারে না। বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফোন করে বলি, অমুক যায়গায় জাটকা বিক্রি হয়, তখন তারা আবার ব্যবসায়ীদের বলে দেয়, মানিক দেওয়ানের ফোনের কারণে আমরা বসে থাকতে পারি না। এখানে যারা আড়তদার তারা খুবই প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ। এদের ভয়ে অনেক মানুষ কিছু বলে না। যেভাবে তারা মাছ মারে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া দরকার। যারা বেচায়, যারা ধরায়, তারাই ধরে। এ মাছ দেশের সম্পদ। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সোনার বাংলা গড়তে ৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। এ নদীর ইলিশ মাছ রক্ষা করতে পারলে এখনই সোনার বাংলা গড়া সম্ভব।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রশিদ জানান, ওই আড়তে প্রতিদিনই জাটকা মাছ বিক্রি হয় এমন সংবাদ আমাদের কাছে আছে। ইউএনও স্যার, এসিল্যান্ড স্যার ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্যারসহ আমরা একটি বড় ধরনের অভিযানের চিন্তা করতেছি। তিনি বলেন, আমরা গত ক’দিন আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইকিং করে জাটকা বিক্রি করার সময় ৩জনকে মাছসহ আটক করেছি। তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট স্যার সাজাও দিয়েছেন। আমরা আশা করি চরভৈরবী থেকেও আমরা বিপুল পরিমাণ মাছসহ তাদের আটক করতে পারবো। সেই লক্ষ্যেই আমরা পরিকল্পনা করছি।

নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চরভৈরবী মাছ ঘাটে সকাল বেলা জাটকা ইলিশ মাছ বিক্রি হবার বিষয়টি ইউএনও স্যারকে বলেছি। তিনি বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে একটি অভিযান দিবেন। আসলে মৎস্য অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে উপরে অভিযান দিতে পারি না। এছাড়া আমাদের ফোর্সরা কুমিল্লায় ট্রেনিংয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করি নদীতে অভিযান পরিচালনা করে জাটকা মাছগুলো রক্ষা করতে।

উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি, খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করবো। ইতিমধ্যে এসিল্যান্ডকে বলে দিয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়