প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দখলকৃত সেচ খাল এখন ড্রেন
বর্ষাকালে এক সময়ে এই খাল দিয়ে ছোট আকারের হলেও নৌকা চলাচল করতো। কিন্তু পর্যায়ক্রমিক দখল প্রক্রিয়ার কারণে সেই খালটিই এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে। সেই ড্রেন দিয়ে পানি চলাচলেও ঘটছে বিঘ্ন। আর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় ড্রেনে পরিণত হওয়া খালের পানি রাস্তায় উঠে আসে। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে সেচকার্য চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। শুধু তা-ই নয়, খালের মুখের উপর পাকা স্থাপনা তৈরি করে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে খালটিকে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামের।
|আরো খবর
ইতিমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন আবাদ করতে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্যে স্থানীয় লোকজন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়।
অভিযোগে প্রকাশ, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর বাজারের দুইশত গজ উত্তর পাশের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি খালের ওপর পাকা ব্রিজের সরকারি রাস্তাটি ৪৭০২ দাগে এবং পাশেই ৪৭০১ দাগে সরকারি খালটি। আবার ৪৭০০ দাগে খালের ওপর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬৮৭, ৪৬৭৮, ৪৬৭৯, ৪৬৮০, ৪৬৮১, ৪৬৮৮, ৪৬৮৯ দাগসহ আশপাশের অনেক দাগের মধ্যে থাকা খালটি এক সময়ে ১১-১২ ফুট থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। এতে ইরি মৌসুমে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে দখল হতে থাকলে দুই গ্রামের সেচ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং তাদের অভিযোগে বর্ণিত স্থানে পাকা স্থাপনা নির্মাণসহ এক সময়ের ১১/১২ ফুটের খাল যে দখল হয়ে এখন সর্বোচ্চ তিন ফুটের খালে পরিণত হয়েছে, সেটি দেখে গেছে।
পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামের সেচ ম্যানেজার আব্দুল মান্নান মুন্সি ও আমিনুল হক ভূঁইয়া জানান, এক সময়ে দুই গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত খালটি বর্তমানে ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এই খাল দিয়ে বর্ষাকালে নৌকা চলতো। কিন্তু এখন সেচ মৌসুমে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং বর্ষাকালে পানি উপচে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সেচের পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
একই কথা জানালেন গ্রামের ইব্রাহিম বেপারী, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, নাজমুল হোসেনসহ গ্রামের ভুক্তভোগী বেশ কিছু লোক। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগে নিলে তিন ফসলি জমিগুলোতে যেমন আবাদ বাড়বে, তেমনি খালটি আগের রূপে ফিরলে এলাকার জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে। যে যার মতো করে খাল দখল করে বাড়ি-ঘর তৈরি করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ খাল দখলকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্যে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দেয়া অভিযোগটির তদন্তের জন্যে ফরিদগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ফরিদগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তরের দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ী তিনি তদন্ত করে পরে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।