বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

হাইমচরে জাটকা রক্ষা অভিযানের ন্যায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান যেনো না হয়
হাইমচর ব্যুরো ॥

আজ ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ সময় দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্যে মিঠাপানির সন্ধানে চাঁদপুর ও হাইমচরের মেঘনা নদীতে আসে। আর ঠিক এ সময়ই মা ইলিশগুলোকে নিধন করার জন্যে ওঁৎপেতে বসে থাকে অসাধু চক্র। শুধু জেলেই নয়, এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও তারা ব্যাপক হারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইলিশ মাছ রক্ষায় উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক যতোটা সচেতনতামূলক সভা করা হয় তার চাইতেও বেশি হারে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সম্পদ ইলিশ নিধন চক্রগুলো। যা এখন চায়ের দোকানে কিংবা হাটবাজারে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তন করে নতুন করে সাজালেই অনেকটাই জাতীয় সম্পদের রক্ষা হবে--এমনটাই আলোচনায় রয়েছে।

মৎস্যজীবীদের মতে, ইলিশের লোভ সামলাতে না পারা পর্যন্ত কখনোই ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কারণ যারা ইলিশ নিধন করে এবং যারা অভিযান পরিচালনা করে তাদের অনেকের মাঝে ডিমওয়ালা ইলিশের লোভ রয়েছে। যার ফলে কখনোই অভিযান পুরোপুরি সফল হয় না। অভিযান সফল করতে হলে সর্বপ্রথম ইলিশের জন্যে এমন লোভ সামলাতে হবে। বিভিন্ন অভিযানের সময় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশের কেউ কেউ আটককৃত ইলিশ মাছগুলোর মধ্য থেকে বড় সাইজের মাছগুলো পাঠিয়ে দেয় আত্মীয়স্বজনের ফ্রিজে। ছোট ছোট মাছগুলো ফটোশুট করে এতিমখানায় বিলিয়ে দেয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পাড়া-মহল্লায় রয়েছে সমালোচনা। পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিযানে কারো হয় সর্বনাশ, আবার কারো পৌষ মাস। অভিযান সফল করতে হলে সরিষার ভেতরের ভূতটাকে আগে তাড়াতে হবে। তাই পুরানো কিংবা এর আগে এই উপজেলায় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণদের বদলি করে নতুন কর্মকর্তা দিয়ে টাস্কফোর্স কমিটিকে সাজাতে হবে। এবারও যদি বিগত জাটকা রক্ষা অভিযানের ন্যায় লোভী কিছু লোককে নিয়ে মা ইলিশ অভিযান পরিচালনা হয় তাহলে ভবিষ্যতে জেলেরা দেশ ছেড়ে পালাবে।

স্থানীয় আব্দুল কাদির, মেজবাহ উদ্দিন, সালাউদ্দিনসহ ক’জন জেলে বলেন, আজকে আমরা মৎস্যজীবীরা মাছ থেকে বঞ্চিত। একমাত্র জাটকা অভিযানে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় এখন নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য নেই। আমরা লাখ লাখ টাকা ঋণ মাথায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। মৎস্য অফিস, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড যদি সঠিকভাবে এ অভিযান চালাতো, তাহলে আজ আমাদের পালানোর মতো অবস্থা হতো না। প্রতিটি অভিযানে বহিরাগত জেলেরা এসে আমাদের নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। বহিরাগত জেলেদের ধারে-কাছেও তারা ঘেঁষতে পারে না। তারা অসাধু জেলেদের কাছে জিম্মি সাজে, নাকি তাদের কেউ কেউ টাকায় বিক্রি হয় সেটা তারাই ভালো জানে। তবে আমরা যতটুক জানি নদীতে অভিযানের সময় টোকেন ও বিকাশ-বাণিজ্যের মাধ্যমে শুধু মাছ নিধনই নয়, মাছের ব্যবসাও চলে ধুমধামে। টাকার কাছে আর বড় বড় মাছের কাছে সবই অসহায়।

তারা বলেন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড বোটের ড্রাইভাররা অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীদের সাথে বিকাশ-বাণিজ্য করে তথ্য আদান-প্রদান করে। যতক্ষণ না বিকাশ-বাণিজ্য বন্ধ না হবে, ততক্ষণ অভিযানও সফল হবে না। এছাড়া অভিযানে আটককৃত মাছও এ ড্রাইভারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। তাদের অভিযান হয় বড় বড় মাছের জন্যে, মাছ রক্ষার জন্যে নয়। দায়িত্ববান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে অভিযান সফল হবে। ইলিশের বংশ রক্ষা পাবে।

জেলে প্রতিনিধি মানিক দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয়, ২০০০ সালের নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া গিয়েছিলো। আর এই কারণে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। গত তিন বছর যাবৎ নদীতে তেমন মাছ নেই। জেলেরা মাছ পায় না বললেই চলে, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকে। সরকার যে অভিযান ও অভায়াশ্রম দিচ্ছে এটা জেলেরাও মানে না, আবার যাদের দায়িত্ব আছে তারা অনেকে মানায় না। একজন জেলে যদি সকলের সাথে মিট না করে, তাহলে তার পক্ষে নদীতে নেমে মাছ ধরা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, হাইমচরে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর জন্যে জেলার মৎস্য অফিসের তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে। তা না হলে সরকার যেখানে জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে হাইমচরের মতো উপজেলায় একজন অতিরিক্ত মৎস্য অফিসার রেখেছে। যিনি ইতঃপূর্বেও হাইমচরে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিটি বছরই তার সময়ে আসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীরা দেদারচে ব্যবসা করে গেছে। ধ্বংস হয়েছে দেশের সম্পদ। গত জাটকা অভিযানেও নদী থেকে ব্যাপক হারে জাটকা নিধন হয়েছে। ইতঃপূর্বে এই মৎস্য অফিসার এই উপজেলায় থাকায় তার সাথে এলাকার লোকজনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে অসাধু জেলে ও অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে তার একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে এ বছর সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা আঁটঘাট বেঁধে মাছ ব্যবসা করার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছে।

মানিক দেওয়ান বলেন, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে হলে এই সময়ে এই উপজেলায় একজন বিসিএস কর্মকর্তা প্রয়োজন। যার সাথে হাইমচরের কোনো জেলে কিংবা ব্যবসায়ীর সম্পর্ক থাকবে না। এছাড়া নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডেও পরিবর্তন প্রয়োজন। নতুন ইনচার্জ, নতুন ফোর্স থাকলে অভিযানে জেলে ও অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে ভয় পাবে। মা ইলিশ রক্ষা করতে হলে টাস্কফোর্স কমিটির অভিযান পরিচালনাকারী টিমকে নতুন করে সাজাতে হবে। কারণ পুরাতন কর্মকর্তারা হয় চোখের শরমে কিছু বলবে না, না হয় টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে। দেশের সম্পদ নষ্ট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নীলকমল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা। আমাদের পুলিশের বদনাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের অভিযানের তথ্য পাচার করবে--তা হতে দেয়া যাবে না। স্পিডবোটের ড্রাইভার বিকাশের মাধ্যমে তথ্যপচারের সংবাদটি আমাদের কাছে আছে। আমাদের এসপি স্যার এ বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরাতন ড্রাইভারদের বাতিল করে নতুন ড্রাইভার নেয়ার জন্যে। আমরা ইতিমধ্যে পুরানো ড্রাইভার জামালকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তীতে ড্রাইভার নিয়োগ দেয়া হবে। এবার যে কোনো মূল্যেই আমরা দেশের জাতীয় সম্পদ মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানকে সফল করবো।

উপজেলা কোস্টগার্ড সিসি নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের যারা নৌকার মাঝি রয়েছেন তারা পুরানো মাঝি। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য আদান-প্রদান কিংবা টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই কিংবা কেউ কোনো অভিযোগ করেনি, তথ্য-প্রমাণসহ কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো। পুরাতন মাঝিদেরকে বদলি করে নতুন মাঝি নেয়ার বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত আমাদেরকে দেয়নি। তাদের নির্দেশনা পেলেই আমরা নতুন মাঝি নিবো।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা অভিযানের আগেই একটি বড় সেমিনার করি, তারপর আপনাদের সাথে অভিযানের বিষয় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত/প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাই। তার আগে অভিযান সম্পর্কিত কোনো কথাই আমরা বলতে পারছি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়