প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর এবং হাজীগঞ্জে গতকাল বিশাল জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুর শহরে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন পরিষদের আয়োজনে এবং হাজীগঞ্জে ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উপলক্ষে এই জশনে জুলুছ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার নবী প্রেমিক সুন্নী মুসলমানরা উভয় জুলুছে অংশ নেন। সবাই সমবেত কণ্ঠে প্রিয় নবী (দঃ)-এর দুরূদণ্ডসালাম, মিলাদ, কিয়াম, নাতে রাসুল, কাসিদা গেয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার, নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসুলাল্লাহ স্লোগানে নবী প্রেমিকদের এই আনন্দ মিছিল ছিলো বর্ণাঢ্য।
২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন কমিটির আয়োজনে শহিদ মিনার মাঠে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) একটি বিশেষ মর্যাদার দিন। এ উপলক্ষে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকেও জশনে জুলুসে অংশ নেন।
প্রিয় নবীর আগমনী বার্তা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত ছিল চাঁদপুর শহর। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আনন্দ মিছিল শুরু হয় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শহীদ মিনারে এসে মিলাদ ও দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বক্তারা বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কোরআন-হাদিসের বাইরে কোনো কথা বলে না। আমাদের নবী আমাদের জন্যে রহমত। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা আমাদের জন্য ফরজ। এ জন্য আল্লাহর রহমত নবীকে পেয়ে আমরা খুশি উদযাপন করি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন পালন করা হয়। যারা নবীর জন্মদিন পালনের বিরোধিতা করে তারা ইসলামের দুশমন। জশনে জুলুছ মানে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাসূলে পাকের শুভাগমনকে উপলক্ষে করে আমরা আল্লাহর নির্দেশে খুশি উদযাপন করি। সকল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ ইবাদত নবীর আগমনে খুশি উদযাপন করা। বক্তারা আরো বলেন, পৃথিবীতে অন্য কোনো ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মানবতার শিক্ষা দেননি। আমাদের নবীজী মানবতার শিক্ষা দিয়েছেন। যারা অন্য ধর্মের মানুষের উপর আঘাত করবে তাদের কেয়ামতের দিন নবীজি সুপারিশ করবেন না। সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে, তাদের ধর্ম তারা পালন করবে। অন্য কোনো ধর্মের মানুষের হৃদয়ে আঘাত করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গাউছিয়া বোরহানিয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা হাফেজ মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাদ্রা দরবার শরীফের পীর সাহেব অধ্যক্ষ আল্লামা মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী, চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আনম মহিবুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওঃ আবু জাফর মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির, বাগাদী দরবার শরীফের পীরজাদা আল্লামা মাহফুজ উল্লাহ ইউসুফী, শাহ্ মাহমুদ বাগদাদী (রহঃ)-এর মাজার শরীফের প্রতিনিধি মাওঃ খন্দকার মোঃ সাইফুল ইসলাম বাগদাদী, সংগঠনের সদর উপজেলা সভাপতি মাওঃ মোঃ মিজানুর রহমান চাঁদপুরী, নিজ গাছতলা দরবার শরীফের পীর সাহেব হাফেজ খাজা ফরিদ আহমদ প্রমুখ।
ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে ও জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওঃ মোঃ আবদুর রাহিমের সঞ্চালনায় মিলাদণ্ডকিয়াম পরিচালনা করেন মাওঃ মোঃ হাসানুজ্জামান ও হাফেজ জাকির হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ জসিম উদ্দিন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, যুবলীগ নেতা আঃ গণি গাজী, চাঁদপুর সদর উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি মাওঃ আব্দুল হান্নান নিজামী ও সাধারণ সম্পাদক মাওঃ নোমান আহমদ, জেলা ইসলামী যুবসেনার সভাপতি অধ্যাপক ফজলুল রশিদ সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নবাব খানসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকসহ সুন্নী জনতা ও চাঁদপুর শহরবাসী।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ধেররা ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফের মেজো শাহজাদা পীরে কামেল হযরতুল আল্লামা সৈয়দ জাহান শাহ্ মোজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর বড় সাহেবজাদা সৈয়দ মাখদুম শাহ্ আল-মাদানীর নেতৃত্বে হাজীগঞ্জে বিশাল পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আলোচনায় বলেন, যারা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আগমন দিবস উদযাপনকে শিরিক-বিদআত ফতোয়া দিয়ে মুসলমানদের গোমরাহী করছে তারা কবরে, হাশরে ও মিজানে জবাব দেয়ার সুযোগ পাবে না। নিশ্চয়ই নবীদ্রোহীরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে স্থান পাবে।
২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ২টায় ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফ থেকে জশনে জুলুছ শুরু হয়ে হাজীগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দরবার শরীফ জামে মসজিদে এসে মিলিত হয়। মসজিদে আলোচনা শেষে বিশ্ব শান্তি কামনা করে মিলাদণ্ডকিয়াম ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ্র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব গাজী মোঃ আব্দুর রাহীম।
অন্যান্যের মধ্যে পীরে ত্বরিক্বত মাওলানা সামসুদ্দোহা বারী, মাওলানা শাহাদাত হোসেন জালালী, মাওলানা শাহজালাল আবেদীনসহ কয়েক হাজার নবীপ্রেমিক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
মোনাজাতের পর মুসল্লিদের তবররুক বিতরণের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর মেহমানদারীর সুন্নাত বাস্তবায়ন করা হয়।