প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জের বড়কুলে জোড়া খুনের ঘটনায় প্রধান আসামী মোঃ সোহাগ (২৫)কে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০ (র্যাব)। প্রযুক্তির সহায়তায় আর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে র্যাব-১০ তাকে আটক করে হাজীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-১০-এর অনলাইন মিডিয়া সেল থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে পরের দিন গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে আসামী সোহাগকে নিয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডস্থলের আশেপাশে অভিযানে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে। সোহাগ একই ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রামের মুন্সী বাড়ির বিল্লাল হোসেনের ছেলে। পেশায় সে ছিঁচকে চোর।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় পাকা একতলা বিল্ডিংয়ের পিছনের গ্রীলের প্লেটবার কেটে ঘরে ঢুকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় দুর্বৃত্তরা। পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার হত্যাকাণ্ডের শিকার দম্পতির বড় মেয়ে রিনা রাণী বর্মণ (৪০) বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১০) দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে থানা পুলিশ এ পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করেছে। তবে সোহাগ ব্যতীত অন্যদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
র্যাবের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশের কারণে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমন ঘটনা জানতে পেরে র্যাব উক্ত চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে সোহাগকে আটক করতে সক্ষম হয়।
র্যাব সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততার সত্যতা স্বীকার করে মোঃ সোহাগ জানায়, সে একটি চোর চক্রের সদস্য। গত ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চুরির উদ্দেশ্যে জানালা ভেঙ্গে তারা দুলাল সাহার ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় উত্তম চন্দ্র বর্মন তুফান ও কাজলী রাণী বর্মণ ঘুম থেকে জেগে উঠে এবং তাদেরকে চিনে ফেলে। এ সময় ডাক-চিৎকারের চেষ্টা করলে আটককৃত আসামী মোঃ সোহাগ ও তার সহযোগীরা মিলে উত্তম চন্দ্র বর্মন তুফান ও কাজলী রাণী বর্মনের হাত-পা, চোখ বেঁধে বিছানার উপর বালিশ চাপা দিয়ে তাদেরকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং পরে ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, সোহাগকে নিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ড এলাকায় অবস্থন করছি। তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে ও আলামত জব্দ করা প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে র্যাব-১০-এর মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পেরে আমরা ছায়া তদন্ত এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত মোঃ সোহাগের অবস্থান নিশ্চিত করি। পরবর্তীতে এসপি মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেলের নেতৃত্বে আমাদের একটি আভিযানিক দল বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর কোতয়ালী থানার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ সোহাগকে আটক করে।
আরো আসামী বা তারা কারা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে সেটি বলা যাবে না। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ১০ জন পর্যন্ত জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি।
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে বড়কুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বড়কুল গ্রামের পান্নার বাড়ি পাশে (কালা সিতার বাড়ি) দুলাল সাহার বসতঘরের শোবার ঘর থেকে উত্তম চন্দ্র বর্মণ তুফান (৭০) ও কাজলী রাণী বর্মনের (৫৫) হাত-পা বাঁধা ও চোখণ্ডমুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের শিকার তুফান স্থানীয় রায়চোঁ (নোয়াহাট) বাজারের মাছ বিক্রেতা ছিলেন। তিনি উত্তর বড়কুল গ্রামের দাস বাড়ির মৃত হর্মণ চন্দ্র বর্ধনের ছেলে। উত্তম তার স্ত্রীসহ যে বাড়িতে থাকতেন সেটিতে তারা কেয়ারটেকার হিসেবে অবস্থান করছিলেন প্রায় ৮ বছর ধরে। ঘটনার দিন থেকেই হাজীগঞ্জ থানা পুলিশসহ চাঁদপুর থেকে পুলিশের বিশেষ শাখা পিবিআই, ডিবি, সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করেন এবং ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।