শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল ও বিএমএ’র শোকসভায় বক্তাগণ

ডাঃ রুবেল ছিলেন মানবদরদি ও পরোপকারী চিকিৎসক

ডাঃ রুবেল ছিলেন মানবদরদি ও পরোপকারী চিকিৎসক
আলআমিন হোসাইন ॥

‘জন্মিলে মরিতে হইবে’ চিরন্তন এ সত্যটি সবার বেলায় প্রযোজ্য। তবুও মানুষ তাঁর কর্মের মাঝে বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে। গতকাল চাঁদপুরের মানবদরদি ও পরোপকারী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেলের শোকসভায় বক্তারা সে কথাই বলেছেন বার বার।

শোকসভায় বক্তারা বলেন, কর্মের মাধ্যমে যে সাধারণ মানুষের আপনজন হওয়া যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে দীর্ঘ বছর চাঁদপুরের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। নিজে হার্টের রোগী হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালে করোনা মহামারির সময় মানুষ যখন ঘরবন্দি জীবনযাপন করেন, তখন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল রোগীদের নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন চাঁদপুর জেলার করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন। জীবদ্দশায় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু সম্মাননা তিনি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর শনিবার তিনি আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মৃত্যুর খবরে চাঁদপুরের মানুষমাত্রই শোকাতুর হয়েছেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাঁর কর্মজীবনের স্মৃতি বর্ণনা করেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ ও কর্মগুণের প্রশংসা করেন।

গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মিলনায়তনে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা বিএমএ’র আয়োজনে ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডাঃ রুবেলের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রিয় স্বামীর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার স্ত্রী নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন। আর তাঁর শিক্ষার্থীরা প্রিয় স্যারকে হারিয়ে হয়েছেন বাক্রুদ্ধ। শ্রেণিকক্ষে স্যারের পাঠদানের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহসিন তাবাচ্চুম আবিদা।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, জীবদ্দশায় ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বহু সম্মাননা পেয়েছেন ঠিক, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এতো সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি, তাঁকে নিয়ে মানুষের শোক প্রকাশ--সবকিছুই তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যা তাঁর জন্যে বিশাল সম্মাননা।

আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রোটাঃ ডাঃ এ. কে. এম. মাহাবুবুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির সময় ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল নিরলসভাবে রোগীদের সেবা প্রদান করেছেন। তিনি নিজের ব্যাপারে কোনো চিন্তা না করেই মানুষদের সেবা দিতেন। সেবা প্রদানের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের খুবই কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। দ্রুত এবং সহজভাবে কীভাবে রোগীদের সেবা প্রদান করা যায় সে ব্যাপারে আমাদের আলাপ হতো।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, ডাঃ রুবেলের অকাল প্রয়াণে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমি অনুতপ্ত। কারণ তাঁকে সেবা করার সুযোগ আমরা পাইনি। জেনারেল হাসপাতালের আরএমও হিসেবে তিনি যে যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাতে তিনি শিক্ষকতা জীবনে সর্বোচ্চটুকু দিতে পারতেন। তিনি খুবই সদালাপী ছিলেন, পরোপকারী ছিলেন। চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে তিনি চাঁদপুরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভের সঞ্চালনায় শোকসভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ, ডাঃ জাহাঙ্গীর খান, ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর, বর্তমান সভাপতি ডাঃ সৈয়দ নূরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম, ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সহধর্মিণী নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত, বর্তমান সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী) ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ, মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল, জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ডাঃ আবু সায়েম, সিনিয়র স্টাফ নার্স মোঃ সাদেক আলী ও ফেরদৌসি জাহান লাভলী।

উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ সালেহ আহমেদ, ডাঃ মোঃ আনিছুর রহমান, ডাঃ সোহেল আহমেদ ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) ও সনাক-চাঁদপুরের সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়াসহ চিকিৎসকবৃন্দ।

সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ। সবশেষে তিনি দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়