প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০
সহসাই শুরু হচ্ছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ। বাংলাদেশ রেলওয়ে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ইতিমধ্যে মাটির লে-আউট করা হয়েছে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ইতঃপূর্বে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বড় স্টেশন মোলহেড স্থানকে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র নামকরণ করে পর্যটন এলাকা করার ঘোষণা করা হয়। মোলহেড চত্বরে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি মোলহেডের প্রবেশ পথে ‘সেলফি স্ট্যান্ড’ নামে ইলিশ ভাস্কর্য নির্মাণ করে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রচেষ্টায় রেলওয়ে বিভাগ পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থলের বড় স্টেশন মোলহেডের ১.০৬ একর জায়গার ওপর ইলিশকেন্দ্রিক আকর্ষণীয় স্থান নির্মাণসহ পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন মোলহেডের পুরো চত্বরটিকে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ নামকরণ করে কেন্দ্রের প্রবেশপথে একটি গেট নির্মাণ করেছে।
চাঁদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র ও ব্র্যান্ডিং জেলা গঠনের সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। এ জন্যে সে সময় চাঁদপুরের তৎকালীন প্রশাসন এখানকার বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণির ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠন করে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি। সেই কমিটি তৎকালীন নদী তীরবর্তী প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাইতো রেলওয়ের অব্যবহৃত ২০০ বিঘা জমি পর্যটন কেন্দ্রের জন্যে ব্যবহার ও বর্তমান রেলের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের অন্যত্র স্থানান্তরকরণের কার্যক্রমও হাতে নেয়। জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাঁদপুরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ ও তা নির্মাণের প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। পরে তিনি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় রেল মন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে ভূমি স্থানান্তর করার একটি সিদ্ধান্তও হয় বলে জানা যায়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিনিধি দল চাঁদপুর মোলহেড সরেজমিন পরিদর্শন করে ‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভের পর থেকে নদীর তীর পর্যন্ত ১.০৬ একর জমি নির্ধারণ করে তাতে ‘রিভারভিউ ফুড পোর্ট’ নামে আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। পর্যটন কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে তিন নদীর মিলনস্থলে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রায় এক একর জায়গা চেয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন আর অগ্রগতি হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মনে করে চাঁদপুর মোলহেডের জায়গাটি যেহেতু রেলওয়ে বিভাগের, তাই রেল বিভাগই এটিকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য উদ্যোগ নেবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) আবু জাফর মিঞা জানান, চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। টেন্ডার শেষে ওয়ার্কঅর্ডারও দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পে ওয়াকওয়ে করা হবে। বসার জন্যে বেঞ্চ ও ক্যাফেটেরিয়াসহ যাবতীয় দৃষ্টিনন্দন কাজ করা হবে।
উক্ত কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী জাহিদ হোসেন জানান, চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডের দৃষ্টিনন্দনের উন্নয়ন কাজ সহসাই শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে কাজটি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কাজ করা কিছুটা সমস্যা। তাই বৃষ্টি কমলে সেখানে কাজ শুরু করা হবে। কয়েকদিন আগে সেখানে মাটির লে-আউট করা হয়েছে।
রেল বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, ইতঃপূর্বে সেখানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃক যা কিছু নির্মাণ করা হয়েছে, তার কিছুই পরিবর্তন করা হবে না। সবই ঠিক থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘রক্তধারা’কেও সুরক্ষিত করা হবে। বড় স্টেশন মোলহেডকে রেলবিভাগ উন্মুক্ত পার্ক হিসাবে আকর্ষণীয় করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা অচিরেই দৃশ্যমান হবে বলে তারা জানায়।