শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জের চাঞ্চল্যকর শিশু সোহান হত্যার রহস্য উন্মোচন
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে পরিবার ও নিজের অভাব মেটাতে অপরাধ প্রবণতা তৈরি হয় তার মধ্যে। বয়স ১৮-এর নিচে ও এসএসসি পরীক্ষার্থী হলেও ইতিমধ্যে সে বিয়েও করেছে। ফলে সে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কৌশলকে বেছে নেয়। তার টার্গেটে পরিণত তারই প্রিয় ছাত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮)। প্রিয় গৃহ শিক্ষকের হাতেই প্রাণ দিতে হলো তাকে। নিখোঁজের ৯দিন পর সোহানের মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত ও ঘাতক আঃ আহাদ আটকের মধ্য দিয়ে ফরিদগঞ্জের আলোচিত সোহান হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ হলো।

গতকাল বুধবার (২৪ মে) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার বিষয়ে অবহিত করেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)। নিহত সোহানের গৃহশিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার্থী আঃ আহাদ (১৮) মুক্তিপণ আদায়ের আশায় অপহরণ ও পরে হত্যা করে বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। প্রেস ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ডিআই-১ মোঃ মনিরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিং ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫মে মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহান নিখোঁজ হয়। পরে তার বাবা আনোয়ার হোসেন পরদিন থানায় এ সংক্রান্ত একটা জিডি করেন। নিখোঁজের ৪দিন পর গত ১৯ মে শুক্রবার সকালে বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে মাটিচাপা অবস্থায় সোহানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ওইদিনই সোহানের পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ঘটনার তদন্তের এক পর্যায়ে সোহানের গৃহশিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার্থী আঃ আহাদকে সন্দেহজনক হিসেবে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আঃ আহাদ (১৮) হত্যার কথা স্বীকার করে।

পুলিশের কাছে সে জানায়, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে সে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল দেখে এ অপরাধটি করার চিন্তা করে। ঘটনার দিন ১৫মে মাগরিব নামাজের পর সোহান বাড়ি ফেরার সময় সে বাড়ির পাশের একটি পুকুরের সামনে বসে মোবাইল ফোন দেখছিলো। এ সময় সোহানকে তার গৃহশিক্ষক আহাদ কৌশলে অপহরণ করে পাশর্^বর্তী নার্সারীতে নিয়ে মুখ ও গলা চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সোহান অজ্ঞান হয়েছে মনে করে সেখান থেকে উঠে গিয়ে আহাদ তার নিজের মায়ের মুঠোফোনের মধ্যে নতুন সীমকার্ড সংযুক্ত করে। পরে সে মুঠোফোন দিয়ে সোহানের মা ফাতেমা বেগমের মুঠোফোনে মুক্তিপণ আদায়ের জন্যে কল করে। কিন্তু সোহানের মা কল রিসিভ না করায় সে ফিরে গিয়ে সোহানের নিস্তেজ দেহ দেখে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে তার মরদেহ নার্সারীতে ফেলে রাখে। এরপর সে নিজেও সোহানের পরিবারের অন্য সদস্যের মতো সোহানকে খুঁজতে বের হয়। রাত গভীর হলে আহাদ তার চাচীর রান্না ঘর থেকে হাত দা নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জমিতে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেয় সোহানকে। পরবর্তীতে সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় এবং পুকুরের মধ্যে নতুন সীমকার্ডটি ফেলে দেয়।

পুলিশ জানায়, আঃ আহাদ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর তার দেয়া তথ্য মতে তাকে সাথে নিয়ে হত্যার সময় ব্যবহৃত জামা-কাপড় ও হাত দা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে শিশু সোহান নিখোঁজ হওয়ার পর এবং পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের পর থেকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পুলিশ। পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদের দিক নির্দেশনায় এবং সার্বক্ষণিক তদারকিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আঃ মান্নান, ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জামাল হোসেন, এসআই রুবেল ফরাজী, এএসআই আবু নঈম টানা ৫ দিন এই মামলার রহস্য ভেদ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে। অবশেষে তারা সফলতার মুখ দেখে।

এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান জানান, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে আমরা থানার পুলিশ ৫দিনের পরিশ্রমে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। অপরাধী কিশোর আঃ আহাদকে গ্রেফতার এবং মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়