প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০
মাত্র ৭ বছর বয়সে বিয়ে হয় আমার মায়ের। তার গর্ভে আমাদের তিনভাই এবং এক বোনের জন্ম। আমার বাবা গোলাম রহমানের মতো আমার মাও ছিলেন রাজনীতি-সচেতন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা তিন ভাই অংশ নেই। তন্মধ্যে আমি (ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার (অবঃ) আবু তাহের পাটওয়ারী এবং ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল কালাম পাটওয়ারী। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অংশগ্রহণে তিনি আমাদের সহায়ক শক্তি ছিলেন। বাবা রাজনীতির মানুষ ছিলেন বলে তাঁরই আদর্শে মা আমাদের সাহস জোগাতেন। আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে অবশ্যই আমার মায়ের অবদান রয়েছে।
২৫ মার্চ গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের আয়োজন করি আমি সংগঠক হিসেবে। সেই ট্রেনিংয়ে আমার বড় ভাই ছিলেন ট্রেইনার এবং ছোট ভাই ট্রেনিং গ্রহণ করেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে আমার মা ও বাবা কখনোই এক স্থানে থাকতে পারতেন না। পাকিস্তানিদের হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ভয়ে লোকজন আমার মা-বাবাকে আশ্রয় দিতে চাইতো না। সর্বশেষ হাজীগঞ্জ উপজেলার সেন্দ্রায় তাদের আশ্রয় হয়। সেখানে যুদ্ধের সময়ে মাঝে মধ্যে দেখা করতে গেলে ‘কোথায় থাকিস্, কোথায় খাওয়া-দাওয়া করিস্’ এই প্রশ্নের পর জড়িয়ে ধরে যুদ্ধে অংশগ্রহণের সাহস জোগাতেন। বলতেন, ভয় নেই, যুদ্ধ করো, জয় আমাদের হবেই।
একইভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা শুনে মা দুঃখ পেয়ে বলেন, তোদের দল কি নেই? তাঁর কথায় আমি আরো উদ্বুদ্ধ হই। ভাগ্নির সেলোয়ার কেটে বানানো কালো পতাকা ও হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করি। আবার পরবর্তীতে তিনি প্রায়শই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা কথা বলতেন। তিনি বলতেন, তাকে সাহস দেয়ার দায়িত্ব তোদের। তাকে না আবার খুনিরা মেরে ফেলে।
তিনি গ্রামের গৃহবধূ হলেও ছিলেন রাজনীতি-সচেতন। রাজনীতি করতে গিয়ে আমি জমি-জমা বিক্রি করলেও আমার মায়ের কাছ থেকে কখনোই অসহযোগিতা পাইনি। এরশাদ সরকারের পতনের কয়েক বছর পর আমার মা মারা গেলেও তার স্মৃতিচিহ্ন এখনো হৃদয়ে ভাসে। মা ও বাবার কোনো ছবি না থাকলেও আমাদের অন্তরে তারা গেঁথে রয়েছেন।
অনুলিখন : প্রবীর চক্রবর্তী, ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।