প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০
এখনও স্বপদে বহাল ও দুই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন আলোচিত শিক্ষক মাহবুব আলম লিটন। চাঁদপুর কণ্ঠে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পরও একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে সরকারি বেতন ভোগ করে যাচ্ছেন। দুই জেলার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে বেতন ভোগ করছেন দীর্ঘদিন।
দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন ও ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বললেও এখনও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তাদের সহযোগিতাতেই চলছে এমন দুর্নীতি। দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিত হওয়ার পরও কীভাবে একই ব্যক্তি দুই জেলায় দুই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে পারছেন, এ বিষয়ে নানারকম প্রশ্ন সচেতন মহলের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে প্রতিনিয়তই ক্লাস পরিচালনা করে আসছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এই প্রতিষ্ঠানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস পরিচালনা করেছেন।
জানা যায়, কোচিং-বাণিজ্যের জন্যেই তিনি মূলত বাবুরহাট কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে তার কাছে কোচিং করতে বাধ্য করা হয়।
শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন প্রায় ১১ বছর দুই প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি করছেন ও ২ প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন ভোগ করছেন। এ বিষয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ধারাবাহিকভাবে আরো সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল ‘এখনও বহাল রয়েছেন একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক’ সংবাদ।
শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন প্রথমদিকে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করলেও পরে তিনি বিনা বেতনে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন মর্মে পত্রিকায় একটি প্রতিবাদলিপি প্রদান করেন। তবে তিনি কোন্ নিয়মে বা কোন্ বৈধতায় দুই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তির প্রসপেক্টাসে শিক্ষক পরিচিতির পাতায় দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে অত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের বার্ষিক বনভোজন সেন্টমার্টিনেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি এ বিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনসহ দিনব্যাপী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক নীতিমালা থেকে দেখা যায়, এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোনো পদে চাকুরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ জানান, কোনো অভিযোগ বা সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, মাহমুদ আলম লিটন পেশায় একজন শিক্ষক। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স পাস করেন। তিনি বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে খণ্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০১২ সালের প্রথম দিকে। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নন-এমপিওভুক্ত বেতনের তালিকা থেকে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন এবং এর জন্যে প্রতি মাসে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ হাজার টাকা বেতন নেন, যা পূবালী ব্যাংক বাবুরহাট শাখার বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নামীয় হিসাবের এসটিডি-২৭-এর সাধারণ তহবিল থেকে মাহাবুব আলম লিটনের ১৬৭৮৪ ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে প্রতি মাসে জমা হচ্ছে।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক তালিকা থেকে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার রায়পুর কামিল মাদ্রাসার (ইআইএন-১০৭০৩০) ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। যেখানে তার নামীয় ইনডেক্স এন২০৯৭৩৩৭। দেখা যায়, শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির কারণে প্রতিমাসে সরকার থেকে ৩৭ হাজার টাকা গ্রহণ করছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই পদে যোগদান করেন এবং একই বছরের নভেম্বরের ১ তারিখে তিনি এমপিও তালিকাভুক্ত হন।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করা হতো। তার কাছে না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দেয়া হতো এবং ক্লাসে বিভিন্ন সময়ে অপমানজনক কথা বলতো। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, মাহমুদ আলম স্যারের কাছে যারা প্রাইভেট পড়তো, তাদেরকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দেয়া হতো, এছাড়াও যারা খাতায় কম নম্বর পেতো এবং ফেল করতো, তাদেরকে বাসায় নিয়ে পুনরায় খাতায় লিখিয়ে নম্বর দেয়া হতো।
জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। শিক্ষাজীবনে বাবুরহাটস্থ বোনের বাসা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করার ফলে এই এলাকায় পরিচিতি বাড়ে। ছাত্রজীবন থেকে মাহমুদ আলম লিটন টিউশনি পেশায় যুক্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে এ পেশাটি তার লোভে পরিণত হওয়ার ফলে তিনি এই এলাকায় কোচিং বাণিজ্য গড়ে তোলেন।