প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণ করার লক্ষ্যে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার একুশ উদযাপন পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। চাঁদপুর সদরের মূল কার্যক্রম সংঘটিত হয় মূলত পুরাণবাজার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। ৫৪ বছর ধরে একুশে উদযাপনের বিরল ধারাবাহিকতায় যারা আয়োজক হিসেবে ব্যতিক্রম, তাদেরই একজন সংস্কৃতি সংগঠক, সংগীত শিল্পী এবং প্রগতিশীল মানুষ রফিক আহমদ মিন্টু। ভাষার মাস উপলক্ষে চাঁদপুর কণ্ঠে তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি পুরাণবাজারে একুশ উদযাপনের সাথে যখন জড়িত হন তখন আপনি কী করতেন? কেনো জড়িত হন?
রফিক আহমদ মিন্টু : ১৯৭৬-৭৭ সালে একুশ উদযাপনের সাথে জড়িত হই। স্বাধীনতাণ্ডউত্তর চাঁদপুরে পুরাণবাজার ছাত্র সংসদ নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধফেরত এক ঝাঁক মুক্তিযোদ্ধা এবং সেই সাথে বহু উদ্যমী তরুণ সমন্বিতভাবে পুরাণবাজারের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজের নেতৃত্ব দিতে শুরু করে। বিশেষ করে এসব আয়োজনের সাথে একুশ উদযাপন তাদের একটি বড় বাৎসরিক কর্ম হয়ে দাঁড়ায়। তাদের থেকেই উদ্বুদ্ধ হই এবং জড়িত হই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : একই সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তথা একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ থেকে এতোটা দীর্ঘ সময় একুশ উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি পালনের পেছনে আপনাদের উদ্দেশ্য কী? সে উদ্দেশ্য কি সাধন হয়েছে?
রফিক আহমদ মিন্টু : কোনো বড় কাজই একা হয় না। আমাদের স্বাধীনতাও এসেছে সার্বজনীন অংশগ্রহণে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে স্বাধীনতা আসলেও স্বাধীনতার পর থেকে আবার নানা দ্বিধাবিভক্তি শুরু হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সবাইকে চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ধরে রাখার একটি চেষ্টা আমাদের ছিলো। সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না হলেও কিছুটাতো হয়েছে। আমি নিজেও সংসার-বাসে হারিয়ে যাইনি, এটিও একটি সফলতা, আবার হাল ছেড়েও তো দেয়া যায় না। ফল একদিন আসবেই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : একুশে উদযাপনে পুরাণবাজারে আর কতোদিন এতোটা অবিচ্ছিন্ন থাকতে চান?
রফিক আহমদ মিন্টু : যতদিন শরীরে প্রাণ আছে এবং বাক্রুদ্ধ না হই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাদের অর্জন কী?
রফিক আহমদ মিন্টু : আমার অর্জন আমি একঝাঁক তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীকে এই কাজে টানতে পেরেছি। একুশের চেতনায় ঋদ্ধ হয়েই তারা মানবিক হয়ে উঠবে, মানুষকে ভালবাসবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, রফিক আহমদ মিন্টু পুরাণবাজার একুশ উদযাপন পরিষদের বর্তমান সহ-সভাপতি। উদয়ন কচি-কাঁচার মেলা ও উদয়ন সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে আনন্দধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তনের অধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক। চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে তাঁর বিচরণ প্রায় পঞ্চাশ বছর। তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিষদের কার্যকরী সদস্য এবং জাতীয় প্রশিক্ষক দলের সদস্য। তাঁর বাবা জালাল আহমেদ ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবী এবং সবশেষে স্কুল শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি একজন কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি তিনটি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে একমাত্র গ্রন্থ ‘আমানুল্লাহ’ নাটক দুটি সংস্করণে ছাপানো হয়েছে, যা বর্তমানে বাজারে আছে। বাকি কয়েকটি পা-ুলিপি আকারে আছে।