প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে টিসিবির কার্ড চাইতে গেলে বিধবাকে মারধর ও জুতাপেটা করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। তিনি বলেছেন, আমি থাপ্পর উঠিয়েছি, তবে দেইনি। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ১ জানুয়ারি রোববার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদে।
অভিযোগ ও সরেজমিন জানা গেছে, গজারিয়া গ্রামের দেওয়ান বাড়ির মৃত তৈয়ব উল্লাহর স্ত্রী পারভিন বেগম (৫০)। তিনি টিসিবির একটি কার্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন রিপনের কাছে প্রায় দুমাস যাবৎ ঘুরছিলেন। রোববার সকালে পুনরায় তিনি ইউপি কার্যালয়ে যান। সে সময় কার্যালয়ের সামনে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছিলো। টিসিবির পণ্য দেয়ার আশ্বাসে সচিব তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পরও কার্ড বা পণ্য কিছুই না পেয়ে তিনি সচিবের কক্ষে যান। সেখানে সচিবের সঙ্গে বাকবিত-া হয় ও ক্ষুব্ধ হয়ে গালাগাল করেন। এতে ক্ষিপ্ত সচিব পারভিন বেগমকে চড়-থাপ্পর দেয়াসহ জুতা দ্বারা পেটান। ওই সময়ে পারভিন বেগমের শ্লীলতাহানি করার চেষ্টাও করেন। খবর পেয়ে পারভিন বেগমের কন্যা উপস্থিত হয়ে মাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। এ ব্যাপারে বাদী হয়ে পারভিন বেগম ফরিদগঞ্জ থানায় গতকাল একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে গতকাল বেলা ২টায় ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলে সচিব আমির হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান মুঠোফোনে আমাকে বেলা ১২টায় বলেছেন উদ্বৃত্ত থাকলে পারভিন বেগমকে টিসিবির পণ্য দিতে। কিন্তু উদ্বৃত্ত পণ্য অন্যদের কাছে বিক্রি করে বিকেল ৪টায় টিসিবির কর্মীরা চলে যান। পণ্য না পেয়ে পারভিন বেগম আমাকে গালমন্দ করেন। পারভিন বেগমকে জুতা দ্বারা মারার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি বলেছি থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পারভিন বেগম সকাল ৯টায় এসেছে। ‘উদ্বৃত্ত পণ্য ছিল ও পাঁচ ঘন্টায়ও তাকে পণ্য দিতে পারেননি কেনো’ এ প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সরেজমিন তথ্য সংগ্রহে গেলে সচিবের কক্ষের এক কোণে একটি কার্টুনের ভিতর টিসিবির পণ্য দেখা যায়। জানতে চাইলে সচিব বলেন, এগুলো অন্য একজনের। ‘আপনি ইউএনও অথবা ডিসিকে এখন পর্যন্ত ঘটনা জানিয়েছেন কি না’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।
এদিকে পারভিন বেগমের মুঠোফোনে কল দিলে তার কন্যা ফাতেমা বেগম (২০) জানান, মা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সচিব আমাকে থানা প্রাঙ্গণের কোণে ডেকে নিয়ে বলেছেন, কিছু টাকা নিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে, আমি রাজি হইনি।
এ বিষয়ে জানার জন্য চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন রিপনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে ম্যাসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই নূরুল ইসলাম বলেছেন, আমার নামে এমন একটি অভিযোগের কপি দেয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমুন নেছাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমি তো এইমাত্র আপনার কাছ থেকে শুনেছি, খবর নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।