বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৮

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন

সরকার পতনে বিএনপি না জামায়াত, কে ছিল মূল শক্তি?

প্রতিবেদন: মো.জাকির হোসেন
সরকার পতনে বিএনপি না জামায়াত, কে ছিল মূল শক্তি?
ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ফিরেছে। দেশে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) এক বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ সরকারের দমন-পীড়ন এবং আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী এর মধ্যে তাদের ভূমিকা নিয়ে যে তুলনা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে।

বিএনপি: আন্দোলনের মূল শক্তি এবং জনগণের দাবির প্রতিফলন

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের বিক্ষোভে বিএনপি ছিল মূল সংগঠক এবং আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবেদনটি বলছে, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে, যা দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন ছিল এককভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে, এবং আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়। আন্দোলনটি শুধু এক দল বা এক এলাকার প্রতিরোধ ছিল না, বরং এটি একটি বৃহৎ জনগণের দাবি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য ছিল।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিলেও, তাদের ভূমিকা ছিল গৌণ এবং বিচ্ছিন্ন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। কিছু বিচ্ছিন্ন কর্মী অংশগ্রহণ করলেও, দলটি রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে পারিনি।

সরকারের দমন-পীড়ন: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি সরকারের দমন-পীড়নের জন্য আলাদা গুরুত্ব দিয়ে উঠে এসেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের ঘটনা বারবার ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যাতে তারা তাদের আন্দোলনকে দমন করতে পারে। সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে বিরোধী মতের প্রতি নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান—

জাতিসংঘের প্রতিবেদন এটি আরও পরিষ্কার করে যে, সরকার রাজনৈতিক ভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে খোঁড়া অজুহাত তৈরি করার জন্য জামায়াতকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপিই ছিল আন্দোলনের মূল চালক। জামায়াতের অংশগ্রহণকে সরকার বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছিল, অথচ সত্যে সেটা ছিল সামান্য।

সহিংসতা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিসংঘের উদ্বেগ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, বাংলাদেশে আন্দোলনের সময় সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ব্যাপক ছিল। প্রতিবেদনটি জানায়, ১,৪০০ জনের বেশি নিহত এবং ১১,৭০০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন, যার মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন। বিরোধী মতকে দমন করতে গুম, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন একদিকে সরকারের দমননীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে, অন্যদিকে বিএনপির রাজনৈতিক সঠিক ভূমিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একযোগভাবে বলা হয়েছে যে,

বিএনপি ছিল ২০২৪ সালের বিক্ষোভের মূল চালক। প্রতিবেদনটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে সক্ষম হবে এবং বিএনপির আন্দোলনকে বৈধতা প্রদান করবে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজনৈতিকভাবে বিক্ষোভের মধ্যে যুক্ত না হলেও, তাদের অংশগ্রহণ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে একটি কৌশল হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

এটি পরিষ্কার যে,সরকার জনগণের আন্দোলনকে দমন করার জন্য জামায়াতকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, অথচ বাস্তবতা হলো,

বিএনপি ছিল একমাত্র সংগঠক এবং আন্দোলনের মূল শক্তি।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, কারণ এতে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিএনপির নেতৃত্বের ভূমিকা একটি নতুন আলোকে পরিগণিত হবে।

লেখক: মো.জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়