বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

নৌ কমান্ডো হিসেবে পলাশীর মাঠে আর ভাগীরথী নদীতে ট্রেনিং করেছি
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুল ইসলাম। হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব রাজারগাঁও আলতাফ বেপারী বাড়ির মৃত আবদুল মতিনের ছেলে। ৮ সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে আছেন। ১৯৭১ সালে ছিলেন ডিগ্রি শিক্ষার্থী। হাজীগঞ্জ থানা থেকে ২৫ জনের দলসহ আগরতলার কাঠালী ক্যাম্পে যান তিনি। সেখানে প্রথম ১ সপ্তাহ সাধারণ ট্রেনিং করেন, পরে যোগ্যতার কারণে নৌ কমান্ডো ট্রেনিংয়ে ডাক পড়ে। নৌ কমান্ডো ট্রেনিং করতে লাইনে ৮০ জন দাঁড়ালেও ওয়াহিদুল ইসলামসহ ২৫ জনকে নির্বাচিত করে ভারতীয় নৌ কমান্ডো দল। নৌ কামান্ডো হিসেবে সিলেক্ট করে ট্রেনিং হয় পলাশীর মাঠে আর ভাগীরথী নদীতে। পুরো ৩ মাস সেখানে ট্রেনিং শেষে দেশে এসে অপারেশন করে আবার ভারতে চলে যেতেন তিনিসহ একটি দল। মূল অপারেশনে খুলনার হার্ডিঞ্জ ব্রীজে হামলা করে ভারতে ফেরার পথে পাকবাহিনী ও রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে পুরো একদিন অসহ্য নির্যাতনের শিকার হন। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের নভেম্বরে দেশে ফিরেন। ১০ ডিসেম্বর ফুলছোঁয়া ও মুকুন্দসারে সরাসরি পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, যুদ্ধের সময় নৌ কমান্ডো হিসেবে বেশ কিছু অপারেশন করেছেন। যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

ওয়াহিদুল ইসলাম : ডিসেম্বর মাস আসলে ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন কষ্ট আর বিজয়ের আনন্দ খুব মনে পড়ে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

ওয়াহিদুল ইসলাম : নিজের সহায় সম্পদ দেখাশুনা করছি আর সংসার নিয়ে সার্বিকভাবে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫১ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

ওয়াহিদুল ইসলাম : ভারত থেকে পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রীজ উড়িয়ে দিতে অপারেশন করার জন্য আমরা ৬ জনের একটি দল খুলনায় ঢুকি। অপারেশন করার পর আমাদের ফিরতে একটু দেরি হয়। নদীতে যে মাঝি লোকজন পার করতো, আমাদের ফিরতে দেরি হওয়ায় ওই নৌকা আমরা আর সেদিন পাইনি। রাত সেখানে কাটিয়ে পরের দিন ভোরে নৌকায় করে নদী পার হয়ে ভারতে ঢোকার জন্য পাঁয়ে হেটে রওনা দেই। এ সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একজন গাইড দেন, যিনি সব কিছু চিনেন। সেই গাইডসহ সকালে মাছরাঙ্গা বাজার নামে একটি বাজারে পৌঁছি। সেখানে নাস্তা খেতে গিয়ে রাজাকারের আনাগোনার কারণে নাস্তা না খেয়ে আবারো হাঁটা শুরু করি। কিছুদূর যাওয়ার পর জানতে পারি, সামনে পাক আর্মি আর রাজাকারের ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে গড়ে সবাইকে চেক করাসহ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সবাই একত্রে গেলে নিশ্চিত ধরা পড়বো। গাইডের পরামর্শে ২ জন করে ভাগ হয়ে ক্যাম্প এলাকা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সবশেষ দলে আমি আর আমার থেকে বয়সে ছোট এক সহযোদ্ধাসহ ক্যাম্প পার হওয়ার সময় সেই সহযোদ্ধাকে আটকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এই ফাঁকে আমি ক্যাম্প এলাকা পার হওয়ার সময় ধরা পড়া সেই ছোট সহযোদ্ধা আমার নাম ধরে বেশ ক’বার ডাক দিলে ক্যাম্পের এক রাজাকার দৌড়ে এসে আমাকে পিছন দিক থেকে ধরে ফেলে। সেই ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার আমাকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর খুব মারধর করে। এ সময় পাকবাহিনীর এক আর্মি এসে আমাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু না পেয়ে একটি কাপড় দিয়ে হাত-পা পিছমোড়া করে বেঁধে ক্যাম্পের মাঠে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর সেই পাক আর্মি বেশ ক’টি গুলি করে আমাকে। আমার ট্রেনিং থাকায় গুলি করার আগেই আমি মাঠে গড়াতে শুরু করি, ফলে কোনো গুলি না লাগায় সেই পাক সেনা অসম্ভব রকম খেপে যায়। তখন সে চাবুকের মতো কিছু একটা দিয়ে আমাকে মাঠের মধ্যেই ইচ্ছেমতো বেদম মারধর করে। এরপর আমাকে উঠিয়ে দুই কানে কী দিয়ে যেন আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বিকেলে আমার জ্ঞান ফিরলে সেই রাজাকার কমান্ডার ক্যাম্পের প্রধান পাকবাহিনীর মেজরের কাছে নিয়ে যায়। সেই মেজর আমাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সামনের দিকে না গিয়ে যেদিক থেকে আসছি সেদিকে চলে যাওয়ার আদেশ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেয়। তখন আমার কাছে কোনো টাকাণ্ডপয়সা কিছু নেই বলে জানালে সেই মেজর নৌকায় পার করে দেবার জন্য ক্যাম্প রাজাকারকে বলে দেয়। পরে পিছনে এসে নদী পার হয়ে এক বাড়িতে উঠলে তারা ভয়ে আমাদের দুজনকে স্থান দেয়নি। সেই রাতে ওই বাড়ির পাশের একটি ঝোঁপের মধ্য থাকি। পরের দিন সকালে স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় অনেক কষ্টে ভারতে ফিরে গেলে সেখানে আমাকে চিকিৎসা করানো হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

ওয়াহিদুল ইসলাম : স্বাধীন দেশ পরিচালনা করছে জাতির পিতার কন্যা, তা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আর দেশে রাজাকার দেখলে অসন্তুষ্টিতে ভুগি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

ওয়াহিদুল ইসলাম : মৃত্যু বহু আগেই হতে পারতো, আল্লাহর দয়ায় বেঁচে আছি। তবে মৃত্যুর আগে সুন্দর একটি দেশ দেখার ইচ্ছা আছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

ওয়াহিদুল ইসলাম : পরবর্তী প্রজন্মকে বলবো, দেশটাকে আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি, এবার তোমরা গুছিয়ে নাও।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়