বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:২৬

চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়ক

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে ফোরলেন উন্নীতকরণের কাজ

স্টাফ রিপোর্টার
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে ফোরলেন উন্নীতকরণের কাজ

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৫ বছর পার হলেও শুরু হয়নি শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৯ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ। বাতিল হয়েছে একের পর এক দরপত্র, বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা। দীর্ঘদিন সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় বেহাল সড়ক রূপ নিয়েছে দুর্ভোগের আরেক নামে।

জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম-মোংলা পোর্ট টু পোর্ট দূরত্ব কম হওয়ায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কটি দিয়ে চলাচল করে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। আর এসব বিবেচনায় সম্প্রসারণ, মজবুতকরণ, সার্ফেসিং ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্যে সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ২০১৯ সালে চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে চারটি প্যাকেজে কাজ করার জন্যে কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও সড়কটির কয়েকটি অংশের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে না পারায় কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা টেন্ডার বাতিল শেষে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে মোট ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এদিকে সড়কের কাজ শুরু না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ২৯ কিলোমিটার অংশ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও পণ্য পরিবহন ও চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রী ও চালকরা। ধীরগতির ফলে ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও।

প্রতিনিয়ত খুলনা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করেন ট্রাকচালক রতন মণ্ডল। শরীয়তপুর অংশের সড়কের বেহাল দশার কারণে এই পথটুকু পাড়ি দিতে তার অপচয় হয় কয়েক ঘণ্টা সময়। এতে সময়মতো বাজার না ধরার পাশাপাশি ডাকাতির কবলে পড়তে হয় বলে জানান এই ট্রাকচালক।

রতন মন্ডল বলেন, এই রাস্তার কারণে পার্টির কাছে ঠিক সময়ে মালামাল পৌঁছে দিতে পারি না। আমাদের অনেক কাঁচামাল নষ্ট হয়। আর বেশি রাত হলে ডাকাতিও হয়। আমরা চাই রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।

বাসচালক হোসেন সরদার বলেন, এই সড়কটির মতো এমন বেহাল অবস্থা আর কোথাও নেই। এই সড়কে এলেই গাড়িতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঝাঁকুনিতে টায়ার বার্স্ট, ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা খুব ক্ষতির মুখে আছি। আমরা চাই রাস্তাটি মেরামত করা হোক।

বাসযাত্রী লোকমান বেপারী বলেন, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নেওয়া সম্ভব না। এটা মনে হয় এই জেলার সবচাইতে খারাপ রাস্তা। অন্তত মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও রাস্তাটির কাজ শেষ করা খুবই দরকার।

এদিকে সড়কের ধূলাবালিতে অতিষ্ঠ আশপাশের বাসিন্দারা। ঘরের টিনের চালায় পড়েছে ধূলার আস্তরণ, ধারণ করেছে লাল মেটে রং।

ফাতেমা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে ধূলাবালির কারণে থাকা যায় না। রান্নায় বালু এসে পড়ে, বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যায়। আমরা এই রাস্তার কারণে খুব বিপদে আছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন রাস্তা করা হোক।

অপরদিকে অধিগ্রহণের ৫ বছরেও টাকা বুঝে পাননি কয়েকটি অংশের জমির মালিকরা। টাকা বুঝে পাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি তাদের।

রুদ্রকর আমিন বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহলম লিটন বলেন, ২০২১ সালে এই রাস্তার জন্যে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। আমরা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে জমি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এতো বছরেও রাস্তার কোনো কাজ করেনি, আমাদের টাকাও দেয়নি। আমরা অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমরা চাই দ্রুত আমাদের অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করে রাস্তার কাজ চলমান করুক।

শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, চারটি প্যাকেজের মধ্যে একটি প্যাকেজে শুধু ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সেই অংশের কাজ চলমান রয়েছে। আর বাকি তিনটি প্যাকেজে খুবই সামান্য ভূমি অধিগ্রহণ হয়। পরে ঠিকাদাররা কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে চুক্তি বাতিল করে আবার রিটেন্ডার করা হয়। কিন্তু পরে সেগুলো সুপারিশ করে পাঠালেও নানা কারণে অনুমোদন হয়নি। বর্তমানে আবার রিটেন্ডার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে ১১টি সম্পন্ন প্রায়। তবে আরেকটি সমস্যা হলো, ভূমি অধিগ্রহণের জন্যে যে ৪৩১ কোটি টাকা রাখা আছে তা পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে ১১টি কেসের জন্যে, আরও ৮টি কেসের জন্যে যে ভূমি অধিগ্রহণ রয়েছে তার জন্যে আরও অন্তত ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এজন্যে ডিপিপি সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষের দিকে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, সড়ক বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সড়কের অ্যালাইনমেন্ট প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক একাধিকবার পরিবর্তনের ফলে এটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তাব পায় ২০২২ সালের দিকে। যার ফলে কাজটি দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে প্রত্যাশী সংস্থাকে ৭টি কেসের জায়গার দখল বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে।

সড়কটির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দ্রুত আমরা প্রকল্পটির কাজ উঠিয়ে আনতে পারবো। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করবো তারা যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখেন।

সূত্র-জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়