প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
যৌবনে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে গিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক অনটনে পড়ে জরাজীর্ণ ঘরেই বসবাস করতেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘বীর নিবাস’ নামের বসতঘর পেয়েছেন। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরটি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমের পরিবারে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে।
ফরিদগঞ্জের উত্তর চরবড়ালী গ্রামে ওই মুক্তিযোদ্ধার বসত ঘর নির্মাণের কাজ চলছে এখন জোরেশোরে। ইতিপূর্বে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমের জরাজীর্ণ বসত ঘরসহ তার জীবন সংগ্রাম নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনাবাহিনীতে থাকাবস্থায় আবদুল হাকিম ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর আবদুল হাকিম তার চাকুরি থেকে অবসর নেন। পরে আর্থিক অনটন আর দুরবস্থার কারণে ছেলে সন্তানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ বয়সেই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম তার জীবন জীবিকার স্বার্থে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হন। তার বসত ভিটি ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো সহায় সম্পদ নেই। সন্তানদের নিয়ে জরাজীর্ণ বসত ঘরেই বসবাস করতে বাধ্য ছিলেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার উত্তর চরবড়ালী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ‘বীর নিবাস’ নামের পাকা ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। ছাদে রডের গাঁথুনি ও ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। এ সময় বাড়িতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম তার মনের আনন্দে ঠিকাদারের পাঠানো রড ও ইট বালি সংরক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। আবদুল হাকিম বলেন, ঠিকাদার মামুন পাঠান আমার ঘর নির্মাণের জন্য মানসম্মত মালামাল দিচ্ছেন। কাজটি যেন ভালো হয় সেজন্যে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর প্রতিনিয়ত তদারকি দেখে সত্যিই আমি তাদের কাজে সন্তুষ্ট।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম তার আবেগময় বক্তব্যে আরো বলেন, এই স্বাধীন দেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ববোধ করি। দেশটা যদি স্বাধীন না হতো তাহলে পাকহানাদার বাহিনীতো আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে ফেলতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় আজ তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বীর নিবাস নামে পাকা বসত ঘর উপহার দিয়ে আমাদের যে সম্মানিত করেছেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু ধন্যবাদ নয় নামাজ পড়ে দোয়া করছি।
সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক মামুনুর রশিদ পাঠান বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমসহ আরো বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধার বসত ঘর নির্মাণের কাজ পেয়েছি। কাজগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা রয়েছে। কোনো কাজেই যেন আমার কোনো ঘাটতি না থাকে সেজন্যে আমি প্রতিনিয়ত তদারকি করে যাচ্ছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বসত ঘর নির্মাণ করার কাজ পেয়ে আমি গর্ববোধ করছি।