প্রকাশ : ১৯ মে ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জের এক দম্পতির দুই বছরের একমাত্র পুত্র সন্তান আবদুর রহমান আরাফকে পানির ট্যাংকিতে ফেলে হত্যার দায়ে তিন আসামীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ জসিম উদ্দিন আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। আরাফ হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ও ফারহানা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান। আব্দুল কাউয়ুম একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরি করার সুবাদে চট্টগ্রামে বাস করতেন। আরাফের বাবার দায়ের করা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিন জনই আসামী ছিলেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও আসামীদের স্বীকারোক্তিতে হত্যার রহস্য উঠে আসে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন : চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের মোঃ ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই বাড়ির দারোয়ান মোঃ হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল শিশু আরাফকে। মূলত ভবন মালিককে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে হত্যা করা হয়। যা মামলার তদন্তে উঠে আসে। গত ৩০ মার্চ উক্ত মামলার রায় হওয়ার কথা ছিলো। তার আগেই আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ টেস্টের আবেদন করে এক আসামী। সেই আবেদন নাচক হয়ে যাওয়ার পর রায় ঘোষণা করে আদালত।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাকলিয়া থানার ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নূরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে মামলায় ফাঁসাতে ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ফরিদ। ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন।
জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে ভবনটির সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চায়। মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে যান। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর নাজমা বেগম, তার ছেলে হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নাজমা বেগম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, ভবন মালিক নূরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়। নাজমা বেগম আরো বলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটাই। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করায় ফরিদকে উক্ত ঘটনায় আসামী করা হয়।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি। দেশে আইনের শাসন রয়েছে এটাই প্রমাণ করে। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি, দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।