প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
মতলবে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত নিহত হওয়ার পর থমকে গেছে তার পরিবারের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্রকে হারিয়ে নির্বাক পিতা-মাতা। শোকাহত স্ত্রী, আর অপরিচিত মানুষ দেখে ভয়াতুর চোখে তাকিয়ে থাকে নিষ্পাপ অমরের আড়াই বছরের মেয়ে আর্থি রাণী ভক্ত ও দেড় বছরের ছেলে আর্থ ভক্ত।
অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমার দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে অমর ভক্ত তৃতীয়। আমি ও আমার স্ত্রী অমরের সাথেই থাকতাম। বড় ছেলে জীবন ভক্ত একই বাড়িতে আলাদা থাকে। আমার ছেলে আমাদের নগদ টাকা দিয়ে যেতে পারে নি। তার অর্থ-সম্পদ সবতো ব্যবসায়িক কাজেই ব্যবহৃত হতো। সাংসারিক প্রয়োজনে যখন যা দরকার হতো তা আমাদের দিতো। আমার ছেলেকে খুন করার সাথে সাথে খুনিরা আমার সংসারটাকে তছনছ করে দিয়েছে। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করেছে। আমাদের পরিবারে এখন আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছেলের বউ ও অবুঝ দুই নাতি-নাতিন। ৫ জনের সংসারের এ দায়িত্ব আমি এই বয়সে কীভাবে পালন করবো, কীভাবে চলবো কিছু জানি না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত অমর ভক্তের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ভক্ত জানান, গত চার বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। সুখেই কাটছিল আমার সংসার। স্বামী, সন্তান আর শ^শুর-শাশুড়িকে নিয়ে ভালোভাবেই চলছিলাম। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আমি কীভাবে তাদের মানুষ করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
নিহত অমর ভক্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারে মাধবী শিল্পালয় নামে একটি জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। তিনি এখানে সুনামের সাথে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তার দোকানে গত দুই বছর আগে মুন্সীগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আকাশ নামে এক কর্মচারী চাকুরি নেয়। আকাশ এক বছর আগে চাকুরি ছেড়ে দেয়। আকাশের মাধ্যমেই এক বছর আগে হত্যাকা-ের সাথে জড়িত একই জেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা জয় বিশ^াস ওরফে অনিক চাকুরি নেয়।
অনিক বিশ^স্ত হওয়ার পেছনে কী কারণ আছে তা জানতে চাইলে নিহতের বাবা রবি ভক্ত চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, অনিক যেহেতু দোকানে সবসময় থাকে, তাই প্রতিদিন দোকানের সব লেনদেন সম্পর্কে সে অবগত। এছাড়া অনিক রাতে আমার ছেলের দোকানেই ঘুমাতো। আবার রাতে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় অমর ভক্ত অনিককে সাথে নিয়েই যেত। তার মধ্যে কোনোপ্রকার শঠতা আমরা লক্ষ্য করিনি। তাকে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। তাই তাকে বিশ^াস করেই আমার ছেলে সব কাজ পরিচালনা করতো।
এদিকে অমর ভক্ত নিহত হওয়ার পর তার কাছে যারা স্বর্ণ বন্ধক রেখেছে এমন অনেক লোক নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্তের কাছে ভিড় জমাচ্ছে। তারা তাদের বন্ধককৃত স্বর্ণ অথবা এর বিপরীতে টাকার হিসেব শেষ করতে চাচ্ছে বলে জানান পিতা রবি ভক্ত। রবি ভক্ত আরও জানান, নারায়ণপুর বাজারের অনেক ব্যবসায়ী তাদের নগদ অর্থ আমার ছেলে অমর ভক্তের নিকট জমা রাখতো। আবার তারা এগুলো সময় মতো নিয়ে যেতো। এমন অনেক ব্যবসায়ী আমার কাছে তাদের পাওনা টাকা দাবি করছে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি এগুলোর কোনো সদুত্তর দিতে পারছি না। অমর ভক্তের পিতা জানান, অমর দোকানের সকল লেনদেন আমার জানামতে লিখিতভাবে করতো। তবে আমি দোকানের কোনো তথ্য দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারছি না। কারণ, দোকান খোলার বিষয়ে এখনো প্রশাসনের সাথে কথা বলতে পারি নি।
দোকান খোলা ও ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত জানান, আমি স্বর্ণের ব্যবসা বুঝি না। আবার আমার বয়সও নেই ব্যবসা পরিচলনা করার। তাছাড়া আমার বড় ছেলে স্বর্ণের ব্যবসা বুঝে না। যদি কোনো বিশ^স্ত লোক পাই, তখন দোকান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
সবশেষে নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অমর ভক্তকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের যেন দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করা হয়।