বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ঢাকার হেয়ার রোডস্থ বাসভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি

চাঁবিপ্রবির জমি অধিগ্রহণ থেকে আমার পরিবারের আর্থিক লাভবানের কোনো সুযোগ নেই

চাঁবিপ্রবির জমি অধিগ্রহণ থেকে আমার পরিবারের আর্থিক লাভবানের কোনো সুযোগ নেই
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

চাঁদপুরে সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে ভূমি অধিগ্রহণে শিক্ষামন্ত্রীর পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি বলেছেন, এই জমি অধিগ্রহণ থেকে তার বা তার পরিবারের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

শিক্ষামন্ত্রীর পরিবার ও ঘনিষ্টজনদের কারসাজিতে ১৯৩ কোটি টাকার জমি ৫৫৩ কোটি টাকায় অধিগ্রহণের অভিযোগ ওঠার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শিক্ষামন্ত্রী ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ বিষয়টি কয়েকদিন আগে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে এসেছিলো, সেটা খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ শাবিপ্রবির বিষয়টি নিয়ে তখন আমি অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলাম। এরপরে একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়। আমাকে তার ক্লিপ পাঠান একজন। এরপর আজকে দেশের প্রধান একটি দৈনিকে সংবাদ পরিবেশন হয়েছে। বলা হয়েছে, চাঁদপুরে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সেটার জন্যে জমি অধিগ্রহণে অনেক বেশি মূল্য ধরা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সেখানে সরাসরি আমাকে না বললেও আমার ভাইকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, চাঁদপুরের কোথাও ক্রয় সূত্রে আমার কোনো জমি নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে হয়তো আমার পৈত্রিক ভিটায় জমি পেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু সেখানে আমার নিজের কোনো জমি নেই। যে জমিটি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমার ভাইয়ের বিষয় বলা হয়েছে। আমার ভাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি একটি হাসপাতাল ও একটি বৃদ্ধাশ্রম করার জন্যে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে কিছু জায়গা কিনেছিলেন। কিন্তু যখনই অধিগ্রহণের বিষয়টি চলে আসে, তখনই তিনি জমিটি বিক্রি করে দেন, হস্তান্তর করে দেন।

দীপু মনি বলেন, পরিবার বা ঘনিষ্ঠজন বলতে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা কেউই রক্তের দিক থেকে আমার পরিবারের সদস্য নন। কিন্তু তারা আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। আমার পরিবারের রক্তের সদস্যরা অনেকেই হয়তো আমার জন্যে ঝুঁকি নেবেন কি না জানি না। কিন্তু আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যরা আমার জন্যে ঝুঁকি নিয়েছেন।

জমির মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, জমির মূল্য নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক। তার অফিসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অভিযোগ এসেছে যে, প্রথমে প্রাক্কলনে জমি অধিগ্রহণের জন্য যে মূল্য ধরা হয়েছিল, সেটা ৫৫৩ কোটি টাকা। এরপর দীর্ঘদিন কিছু হয়নি। পরে আবার ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করে প্রাক্কলন করে বলা হচ্ছে অধিগ্রহণ করার জন্যে যে জমির প্রস্তাব করা হয়েছে সেটির বাজার মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, আরেকটি অভিযোগ করা হয়েছে, আমার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানাডা ভিত্তিক একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা একটি ভাঙনপ্রবণ এলাকা। তিনি বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি জমি দেখেছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে কয়েকটি বিবেচনায় এই জমিটি আমরা নির্ধারণ করেছি কিছু কারণে। যেমন অন্য জায়গাগুলো ছিলো হাইওয়ের পাশে। হাইওয়ের পাশে কোনো বিশ^বিদ্যালয় হলে সেখানে কখনো ছাত্র অসন্তোষ দেখা দিলে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব নানা দিক বিবেচনায় এই জায়গাটি আমরা পছন্দ করেছিলাম। এই জমিটির পাশে কিন্তু আমাদের স্থায়ী বাঁধ রয়েছে। তারপাশে একটি বেড়ি বাঁধ রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও বলেছে এখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। তাহলে কেনো এটাকে অনুপযুক্ত বলা হচ্ছে?

নিজের ক্ষোভ জানাতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যখনই আমি চাঁদপুরে কোনো বড় প্রকল্প হাতে নেই তখনই একটি মহল অপপ্রচার চালাতে থাকে। বলা হয় এখানে হবে না, ভেঙ্গে যাবে। মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। আমার বা আমার পরিবারের এই অধিগ্রহণ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোথাও কোনো সুযোগ নেই। তাই আমি মনে করি এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাছাড়া সামনে নির্বাচন এ সময়টাকেও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার ভাই একজন চিকিৎসক। উনি সেখানে একটা হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্যে জমি কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু যখনই উনি দেখেছেন সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটা প্রকল্প হতে যাচ্ছে, তাহলে তো আর সেখানে উনি হাসপাতাল বা বৃদ্ধাশ্রম করতে পারবেন না। পরে এই জমি তিনি রেজিস্টার দলিলমূলে হস্তান্তর করে দেন।

দীপু মনি বলেন, আমি প্রথমেই বলেছি, ওখানে আমার বা আমার পরিবারের কোনো জমি নেই। সেখানে আমাদের দিক থেকে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। ওখানে জাহিদুল ইসলামকে বলা হচ্ছে আমার মামাতো ভাই। কিন্তু আসলে তার সঙ্গে আমার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।

নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা ষড়যন্ত্র, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন সরকারেরই একটি অংশ। যেহেতু আমি সরকারে আছি, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার জন্যে সমীচীন নয়। আমি মনে করি, একটি তদন্ত কমিটি করে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ।

শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেন, আমার দলের জেলার যিনি সভাপতি, তিনি একটি অনলাইন গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। যে গণমাধ্যমে তিনি কথা বলেছেন, আমরা সেটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, আসলে গণমাধ্যমটি কোন্ ধরনের। কোনো অভিযোগ থাকলে তার জন্যে দলীয় ফোরাম ছিল। সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অভিযোগের বিষয়টি জানানো যেতো। কিন্তু সেটা না করে উনারা গণমাধ্যমের কাছে নিয়ে গেছেন। অবশ্য এতে আমার কোনো সমস্যা নেই, লুকোবার কিছু নেই। দলীয় ফোরামে জিজ্ঞেস করা হলে যা বলতাম, গণমাধ্যমেও সেটাই বলবো।

আপনি চাঁদপুরের এমপি। চাঁদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছেন। যে মন্ত্রণালয় এই উন্নয়ন কাজ করবে, আপনি তার মন্ত্রী। এখন জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, জমি না দিলে জোর করে নিয়ে নেয়া হবে- এসব নিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কি কিছুই জানেন না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমার পাশের এলাকাতেও জমি নিয়ে বিরোধ চলে। আমাদের ওখানেও হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। তবে সেটা যে এ সংক্রান্তে, তা আমার জানা নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়