প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনার টিকা নিতে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৬০টাকা হারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আদায় করা এবং টাকার বিনিময়ে ক্ষমতার দাপটে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গতকাল শনিবার বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে অবৈভভাবে টাকা গ্রহণ ছাড়াও স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ নিজের অনিয়মের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহজাহান কবিরের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাথমিকভাবে পার পেয়ে যান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় পূর্ব বড়ালী শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নেছার আহাম্মেদকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাত্রা বেড়ে যায়। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার যথাক্রমে মোঃ তাফাজ্জল, মোঃ মনির ও কুষ্টিয়া জেলার মোঃ সেলিম নিরাপত্তা কর্মীর পদে বিভিন্ন সময়ে চাকুরি করেছেন। তারা আরও বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের যখন ইচ্ছা হয়েছে তখনই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন। নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে।
ক’জন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণকে কেন্দ্র করে পরিবহন ও যোগাযোগের অজুহাতে ২৯০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০ টাকা হারে আদায় করেছেন প্রধান শিক্ষক। টিকার ক্যাম্প ছিলো স্কুল থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক টাকার লোভে পড়ে অবৈধভাবে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শামীম বেপারী নামে এক ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শামীম বেপারী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অথচ তার নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০১২ সালে।
বিদ্যালয়ের প্রতিবেশী হুমায়ুন কবির (৫৫) ও মোঃ মোক্তার (৫০) দুঃখ করে বলেছেন, শামীম বেপারীকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি নিজের বাড়ির দ্বন্দ্বে শামীমকে ডেকে নেন। এতে শামীম বেপারী ওই এলাকার লোকজনের পিটুনি খেয়েছে। তারা প্রধান শিক্ষককে স্বেচ্ছাচারী বলে মন্তব্য করেছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে জমি, ভবন ও বিপুল অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি শাহজাহান কবির। বিদালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর সরলতার সুযোগ বিদ্যালয়ে নানা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা ছাড়াও নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন সর্বমহলে।
এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেন, আমি আপনার সাথে দেখা করবো। তারপর লাইন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি শাহজাহান কবির বলেন, ব্যবসার সূত্রে ঢাকা ও দেশের বাইরে আমাকে থাকতে ও যাতায়াত করতে হয়। বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্যে প্রধান শিক্ষককে সুযোগ দিয়েছি। এমপিওভুক্ত হওয়ার আগে প্রধান শিক্ষকের কর্মকা- যা ছিলো, এমপিওভুক্ত হওয়ার পর তার কর্মকা- তেমন নেই। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়াও বিদ্যালয়ের স্বার্থ বিরোধী কাজ করে নানা বিতর্ক সৃষ্টি করবে-তা কখনো ভাবিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ আলী রেজা আশরাফী বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।