বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে আগত গোসাইরহাটগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ নিউ সাব্বির-২ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রা বিরতিকালে লঞ্চটির আঘাতে ল-ভ- হয়ে যায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটের পন্টুন। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ জানুয়ারি বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে।

এ ঘটনায় লঞ্চটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা টিআই শাহআলম নিজে উপস্থিত থেকে লঞ্চটি ঘাট থেকে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের ঘোষেরহাটগামী নিউ সাব্বির-২ লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাত সোয়া ১টার দিকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রা বিরতির জন্য ঘাটে ভীড়ছিলো। এ সময় লঞ্চটি খুব দ্রুতবেগে এসে পন্টুনে আঘাত করলে পন্টুনটির অংশবিশেষ ভেঙ্গে ল-ভ- হয়ে যায়।

তাৎক্ষণিক চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে নিউ সাব্বির-২ লঞ্চের ৩ জন স্টাফসহ আরো ৩ জনকে নৌপুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) শাহআলম নৌ থানা থেকে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারপর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চাঁদপুর ঘাট থেকে নিউ সাব্বির-২ লঞ্চটি ছাড়িয়ে দেয় বলে ঘাটের বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফ ও সুপারভাইজারগণ এ প্রতিবেদককে জানান।

এমনকি এ বিষয়ে নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম অনেকটা বিমর্ষ ভাষায় সাংবাদিকদের জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র টিআই শাহআলম ও তার সাথে থাকা ঘাটের লঞ্চ সুপারভাইজার রুহুল আমিন এতোটা দুঃখজনক আচরণ করে লঞ্চটি ঘটনাস্থল থেকে সরতে সাহায্য করেন। যা আমরা অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।

অথচ জনস্বার্থে নির্মিত পন্টুনে সরকারের লাখ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও ব্যক্তিগতভাবে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের স্বার্থলাভের কারণে এ বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে লঞ্চ সুপারভাইজারদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, টিআই শাহআলম দায়িত্বপালনকালে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা সঠিকভাবে লিখে স্বাক্ষর করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে।

লঞ্চ চলাচলকালে মূল মাস্টার না থাকলেও তিনি পারমিটে স্বাক্ষর করে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার দিয়ে লঞ্চ চালানোর অনুমতি দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা এমভি সাব্বির-২ লঞ্চের ৩ জনকে দুর্ঘটনার পর আটক করি। টিআই শাহআলম তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বন্দর কর্মকর্তা কাউসারুল ইসলাম, সিপিএস মাহমুদুল হাসান থানদার, টিআই শাহআলম, সুমন ও ঘাট সুপারভাইজার রুহুল আমিনসহ নিউ সাব্বির-২ লঞ্চের স্টাফদের নিয়ে সমঝোতার বৈঠক চলছে। পন্টুনটি মেরামত করে দেবেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা কাউসারুল ইসলাম বলেন, আমরা লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও স্টাফের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। এ বিষয়ে বন্দর ও পরিবহন পরিদর্শক শাহআলমের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তাদেরকে বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়েছি কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে স্টাফদের নাম-ঠিকানা রেখে যাবার অনুমতি দিয়েছি। তবে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে অনুমতি দিয়েছি।